ভেরিফাইড প্রেস

  • ভাইরাল
    • খবর
    • ভিডিও
  • ভুয়া খবর
  • লাইফস্টাইল
    • লাইফহ্যাক
    • ফ্যাশন
    • স্বাস্থ্য
  • প্রকৃতি ও জীবন
  • খেলা
  • Home
  • আমাদের সম্পর্কে
    • ইমপ্রিন্ট
  • ইংরেজি

চিত্রশিল্পী থেকে অ্যানিমেশন ফিল্ম মেকার. একজন চিত্রশিল্পীর অ্যানিমেশন ফিল্ম মেকার হবার গল্প.

এ.এফ.এম মনিরুজ্জামান আজ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অ্যানিমেশন ফিল্ম মেকার। তাঁর জীবনের বিভিন্ন সময়ের চড়াই-উতরাই এবং বাংলাদেশের অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে লিখেছেন কানিজ ফাতেমা।

এ.এফ.এম. মনিরুজ্জামান, ডাক নাম শিপু। গান, আবৃত্তি করলেও আগ্রহ বেশি ছিল আঁকাআঁকিতে। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী এস.এম. সুলতান জীবনের বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন যশোরে। সেখানেই তিনি সম্পূর্ন বিনা খরচে ছোট ছোট বাচ্চাদের রং, তুলি আর কাগজ দিয়ে আঁকতে শেখাতেন। শিপু ছিলেন সেই স্কুলের নিয়মিত ছাত্র, মূলত সেখান থেকেই হাতেখড়ি হয় আজকের এই বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর। আঁকাআঁকিতে ভাল হওয়ায় জাতীয় পর্যায়ের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে টানা তিন তিন বার জিতে নিয়েছিলেন গোল্ড মেডেল।

ছাত্র হিসেবে তিনি কখনো এক কাতারে ছিলেন না। কখনো ক্লাসের ফার্স্ট বয় হলেও কখনো করেছেন ফেল। কিন্তু মিরাকেল ঘটালেন তাঁর মেট্রিক পরীক্ষায়। পাঁচ পাঁচটি লেটার পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। বাড়িতে লেগে যায় মানুষের উপচেপড়া ভীড়। দূরদুরান্ত থেকে মানুষ আসতো ৫ তারকা পাওয়া বালক শিপুকে দেখতে। কারো উপদেশের কমতি নেই। কেউ বলছে ছেলেকে ডাক্তার বানাও আবার কেউ কেউ বলছিলো আর্কিটেক্ট বানাতে । এ যেন ছিল বালক শিপুর জন্যে খ্যাতির বিড়ম্বনা।

১৯৮৪ সাল, শিপু তাঁর স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে। মেট্রিক পাশ দিয়েই ভর্তি হয়ে যাবার কথা চারুকলায়। স্বপ্ন যখন ছুঁই ছুঁই ঠিক তখনই বাবা খুব করে ধরেছেন ছেলেকে আর্কিটেক্ট বানাবেন। শান্ত শিপুও হয়ে উঠলেন নাছোড়বান্দা। ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাঁদে পা না দিয়ে পালালেন বাড়ি থেকে। বাইরে থাকলেন তিন দিন। বাবা ছেলেকে ধরে এনে খুব করে বোঝালেন। বাবার অনুরোধে ইন্টারমিডিয়েটে কলেজে পড়তে রাজি হলেও শর্ত ছিল একটাই। কলেজ পাশ দিয়েই পড়বেন চারুকলায়। ছবি আঁকাই যার নেশা সে কি অন্য কিছুতে মন বসাতে পারে?

ভাল রেজাল্ট করার বিড়ম্বনা তখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিলো বালক শিপুকে। তাইতো প্রস্তুতি ভাল থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় গুনে গুনে উত্তর দিলেন। কোন ভাবেই ৬০০’র বেশি নম্বর পাওয়া যাবে না! হলোও তাই, এইচএসসিতে পেয়েছিলেন ৫১৬ নম্বর। সেকেন্ড ডিভিশন পেয়ে সে ভয়ানক খুশি! এত মাথা খাটিয়েছিলেন শুধুমাত্র নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ার জন্যে। কলেজ পাশ করার পরেই ভর্তি হয়ে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে।

দেশের বাইরে যাবার একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল শিপুর। আগেকার দিনে বড় বড় সব গুনী শিল্পীরা ভীড় জমাত প্যারিসে। কুষ্টীয়া যেমন বাউলদের আখড়া ছিল ঠিক তেমনি প্যারিসও ছিল চিত্রশিল্পীদের আখড়া। তাই মনে মনে প্যারিসে যাবার একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পোষ্ট ইম্প্রেশিনিজম নিয়ে পড়ছিলেন তখন তিনি জানতে পারেন যে, যেই পোস্ট ইম্প্রেশনিজম থেকে আধুনিক চিত্রকলার সূত্রপাত সেই পোস্ট ইম্প্রেশনিজমের সৃষ্টি হয়েছিল আসলে জাপানিজ প্রিন্টের প্রভাবে। এডওার্ড মনে, ভ্যানগঘ, দেগাস, রুশো, সুরাত, গগ্যা, এঁদের ছবির ভিন্নতা এসেছিল জাপানিজ প্রিন্টের প্রভাবেই। জাপানিজ প্রিন্ট ‘উকিইও-এ’ অর্থাৎ ‘ভাসমান পৃথিবীর চিত্রকলা’ দেখে এঁরা তাঁদের ছবিতে প্রথম বোল্ড লাইনের ব্যবহার শুরু করেছিলেন। আর এভাবেই ইউরোপের চিত্রকলা আধুনিকতার দিকে মোড় নিতে শুরু করেছিল। শিপু যখন দেখলো প্যারিসে থাকা বড় বড় শিল্পীরা অনুপ্রানিত হয়েছিল জাপানিজ প্রিন্ট দেখে, তাহলে তিনি নিজে একজন এশিয়ান হওয়া স্বত্বেও কেনই বা জাপান রেখে প্যারিসে যাবার কথা চিন্তা করছেন? তারপরই তিনি শুরু করলেন জাপানে যাবার প্রস্তুতি, ভর্তি হয়ে গেলেন ভাষা শিক্ষা ইন্সটিটিউটে।


শিপুর আত্মপ্রতিকৃতি

এবার আসি তাঁর পাগড়ি পরার গল্পে। বালক শিপু তখন আর বালক নেই, স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। কিন্তু তাঁর মাঝে রয়ে গেছে শিশুসুলভ সব স্বভাবগুলো। নতুন কিছু করে সবাইকে চমকে দিতে খুব পছন্দ করতেন তিনি। একদিন করলেন কি, নতুন ছবি আঁকার নেশায় ৪০ দিনের জন্যে এক গহীন গ্রামে চলে গেলেন। নাওয়া নেই খাওয়া নেই শুধু ছবি আঁকতেন। ভ্যানগঘের মত অনেক কাণ্ডকারখানাও করতেন তিনি। তপ্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে সেই উত্তাপকে তিনি ছবির মাঝে ছড়িয়ে দেবার অপ্রান চেষ্টা চালাতেন। এভাবে দিনের পর দিন পার করতে করতে একদিন আয়নায় দেখে নিজের দাঁড়িগোফওয়ালা চেহারাটি আঁকলেন। সাথে মাথায় পরালেন পাগড়ি। বন্ধুদেরকে ছবি দেখাতেই সবাই বাহবা দিল। বন্ধুদের সহযোগিতায় মাথায় পাগড়ি বাঁধলেন শিপু। পোশাকও ছিল শিপুর কাছে শিল্পেরই একটি অংশ। বেশ ফ্যাশানেবল ছিলেন তিনি। রং তুলির শিল্পী হওয়ায় কালার কম্বিনেশন বেশ জানতেন এবং তা তাঁর কাপড় চোপড়েও স্পষ্ট বোঝা যেত। গায়ের রংয়ের সাথে মিলিয়ে কোন রংটা পরলে মানিয়ে যাবে সেটা বুঝে সেরকম পোশাক পরতেন। তরুণ বয়সে অনেক ফ্যাশন করলেও কোনটিই তেমন স্থায়ী হয়নি। কিন্তু পাগড়ি পরার ফ্যাশনটা যেন তাঁর মনে ধরে গেল। শুরু করলেন নিয়মিত পাগড়ি পরা। পোশাকের রং এর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই মাথায় পাগড়ি পরেন তিনি।

পাগড়ি পরার সুবাধে কোন বিড়ম্বনায় না পড়লেও, পেয়েছেন অনেক সুবিধা। অনেকে শিখ মনে করে বাসের সিট ছেড়ে দিত; আবার বিদেশি ভেবে বেশ সম্মানও করত। যখন প্রথম স্ট্রিট প্রোর্ট্রেট আঁকা শুরু করলেন তখন খুব ভীড় জমত। আশেপাশের সবাই খুব মজা নিয়ে তাকে এবং তাঁর ছবি আঁকা দেখত। এভাবেই তিনি পরিচিত হলেন একদল পথশিশুর সাথে। বাচ্চাদের সাথে গল্প করতেন, তাদের ছবি এঁকে দিতেন; তাদের দেওয়া খাবারও খেতেন। শিপু যেমন বাচ্চাদের ভালবাসতেন , বাচ্চারাও তাকে ভালবেসে চকলেট, চিপস দিয়ে যেত। একদিন বাচ্চাদের সাথে ছবি আঁকতে আঁকতে দেখলেন পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো কিছু পতিতা। শিপু অনুধাবন করলেন, বাচ্চাদের দলে থাকা বাচ্চা মেয়েগুলোকে যদি বিকল্প কোনো পথ দেখিয়ে কাজে লাগাতে না পারেন, তাহলে তারাও হয়তো কয়েকবছর পর এরকম পথে যেতে বাধ্য হবে। শিপু ভাবলেন, তিনিও তাঁর গুরু সুলতান কাকুর মত আর্টের স্কুল খুলবেন; যেখানে বাচ্চারা আঁকবে আর তিনি শেখাবেন। যেই কথা সেই কাজ! ঢাকার নিউ মার্কেট থেকে অল্প দামে কাগজ আর রংতুলি কিনে শুরু করে দিলেন স্কুল। বাচ্চারাও খুব শিখছে। কারণ তারা শিপু ভাইয়ার মত হতে পারলে পেট চালাতে আর কোন অসুবিধেই হবে না।

একদিন বাচ্চারা খুব করে বায়না ধরে বসল। তাদের গল্পের বই কিনে দিতেই হবে। শিপুও ভাবছিলেন ঠিক একই কথা। তারা স্কুলে না গেলেও বইতো পড়তেই পারবে। তাদের কী ধরণের বই প্রয়োজন, কোন ধরণের বই তাদেরকে একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে; সেই খোঁজেই আবার ঘুরতে থাকলেন বইয়ের দোকানে দোকানে। কিন্তু মনের মত কোনো বই পেলেন না যেটা তিনি বাচ্চাদের হাতে তুলে দিতে পারেন। মনের মত কোন বই না পেয়ে তিনি ভাবলেন, নিজেইতো ছবি এঁকে তাদের জন্যে বই বানাতে পারেন। কমিক বানানোর আইডিয়াটা তখনই প্রথমবারের মত তাঁর মাথায় আসে। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি যে তাঁর কমিক তৈরির আইডিয়াই তাকে ধীরে ধীরে এনিমেশনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। শিপু প্রথমে গল্পের প্লট তৈরি করলেন, তারপর পুরোদমে কমিকের জন্যে কাজে নেমে পড়লেন। ভেবে যাচ্ছিলেন গল্পের প্লট। বাচ্চারাই যেন তাঁর প্রাণ হয়ে উঠছিলো।


শিপুর আঁকা পথশিশুদের নিয়ে ক্যারাক্টার ডিজাইন

দেশের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন থাকলেও আপাতত সব বাদ দিয়ে মন বসান ঐ বাচ্চাদের জন্য কমিক বানানোতে।

তিনি যখন বাচ্চাদের ভবিষৎ গড়তে ব্যস্ত, ঠিক তখনই তার নিজের ভবিষৎ গড়ার জন্যে পেয়ে যান জাপানের ভিসা। কিন্তু খুব একটা খুশি হতে পারলেন না তিনি। সেই পথ শিশুদের রেখে কোথাও যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আবারও পড়ে যান খ্যাতির বিড়ম্বনায়। অনেকেই তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে জাপানে যাবার ব্যাপারে মোটামুটি রাজি করাতে পেরেছিলেন কিন্তু তারপরেও দ্বিধা তাকে পিছনে টানছিলো। এমনি সময় শিপুর ফটোগ্রাফার বন্ধু নওরোজ এপোলো একদিন তাঁকে বলছিলেন তিনি জাপানে গিয়ে চাইলেই এনিমেশন নিয়ে পড়তে পারেন। কারণ জাপান না’কি আনিমাশনে বিখ্যাত। এনিমেশন শিখে দেশে ফেরত আসলে আরো ভাল কিছু উপহার দিতে পারবেন ছোট ছোট বাচ্চাদের। কথাটা যেন শিপুর মনে ধরে গেল। বাচ্চাদের ভাল বই পাননি বলেই কমিকস বানাতে চেয়েছিলেন আর জাপানের ভিসা তাকে সেখানেই নিয়ে যাবে যেখানে থেকে তিনি বাচ্চাদের প্রিয় জিনিষ কার্টুন ছবিই বানাতে শিখবেন। বাচ্চাদের ভাল কিছু দেবার উদ্যেশ্যেই পাড়ি জমালেন জাপানে।

জাপানে গিয়ে ভর্তি হলেন ল্যাংগুয়েজ স্কুলে, আর ৩ দিনের মাথায় কাজ পেয়ে গেলেন একটা ফ্যাক্টরিতে। তারপর সেখানেই পড়লেন প্রায় দেড় বছর। এরপর জাপানীজ ট্রেডিশনাল পেন্টিং ( নিহোনগা ) নিয়ে পড়লেন আরো দুবছর। এদিকে তাঁর ইচ্ছা অ্যানিমেশনে পড়ার কিন্তু সেগুলো বেসরকারি কারিগরি বিদ্যালয় হওয়ায় খরচ ছিল প্রচুর। শিপু ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। ভাবছিলেন ফিরে চলে আসবেন। ঠিক এমনি সময়, এক আর্ট এক্সিবিশনে তার সাথে পরিচয় হয় ওসাকা আর্ট ইউনিভার্সিটির পেইন্টিং ডিপার্টমেন্টের একজন টিচারের সাথে। পড়ালেখা খুব ব্যয়বহুল বলে শিপু দেশে ফেরত আসতে চায়, এ কথা শুনে তিনি তাঁকে ওসাকা আর্ট ইউনিভার্সিটির কথা বলেন, এবং সেখানকার শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন । শিক্ষকরা ভর্তির ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখালো। কিন্তু এখানেও বাঁধা। ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করলেও, ভর্তির জন্যে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না শিপুর কাছে। শিপু অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না, এ কথা শুনে ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের শিক্ষক হাকামাদা ইয়াসুকো শিপুর ভর্তি ফি জোগাড় করে দিয়েছিলেন, এটাই ছিল শিপুর জাপানে প্রথম লোন। মনে মনে ঠিক করলেন সময় সুযোগ মতো সব শোধ করে দেবেন। শিপুই ছিলেন ওসাকা আর্ট ইউনিভার্সিটির মার্স্টার্সের প্রথম এনিমেশনের ছাত্র এবং পরে সাথে যোগ দিলেন কেনজি তাকাহাশি এবং চিতোসি মারুইয়ামা। শিপু ও তাকাহাশি মাস্টার্স করেন অ্যানিমেশন ফিল্ম পরিচালনা নিয়ে এবং চিতোসি মারুইয়ামা মাস্টার্স করেন অ্যানিমেশন ফিল্মের শব্দ নিয়ে ।

শিক্ষকের কথা অনুযায়ী তাঁদের তিন জনকে মিলে একটি এনিমেশন ফিল্ম বানাতে হবে যার দৈর্ঘ্য হবে ৩০ মিনিট। কিন্তু অ্যানিমেশন ফিল্মের জন্য ৩০ মিনিট দৈর্ঘ্য অনেক বেশী লম্বা। প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। এদিকে শিপু চাইছিলেন বাচ্চাদের নিয়ে এনিমেশন বানাতে আর তাকাহাশি চাইছিলেন ‘গেইশা’ দের নিয়ে কাজ করতে। ‘‘গেইশা’ ছিল জাপানিজ কালচারে পানশালায় পানীয় সার্ভ করা মেয়েরা। যেখানে এনিমেশনের টার্গেট অডিয়েন্সই হবে বাচ্চারা সেখানে ‘গেইশা’দের নিয়ে গল্প বানানো ছিল বেশ বেমানান সেজন্যেই শিপুর গল্পের আইডিয়াটাই স্যারের কাছে বেশি গ্রহনযোগ্যতা পায়। কিন্তু ঘটনা ঘটলো শিড্যুল বানাতে গিয়ে, তাঁরা দুজনেই দেখলেন যে কোন ভাবেই পাঁচ মিনিটের বেশি গল্প বানানো সম্ভব নয়। আর ৩০ মিনিটের এনিমেশন দুবছরে শেষ করা ছিল প্রায় দুঃস্বপ্ন। কিন্তু স্যার কোন কথা শুনতে নারাজ। তাই ৩০ মিনিট এর একটা শিড্যুল বানিয়ে স্যারকে জমা দিলে সেই অনুযায়ী দুজনে কাজও শুরু করে দেন। গল্পটা যেহেতু বাংলাদেশি পথশিশুদের, তাই তাকাহাশি আর শিপু দুজনই গল্পের প্লট সংগ্রহ করতে চলে আসেন বাংলাদেশে। ক্যারেক্টার, এনিমেশনের ব্যাকগ্রাউন্ড, গল্পের প্লট ইত্যাদি ঠিক করে আবার ফেরত গেলেন জাপানে।


অ্যানিমেশনের জন্যে শিপুর আঁকা ঢাকার শাহবাগ এলাকা

শুরু হয়ে গেল পুরো দমে কাজ করা। সপ্তাহের ৭ দিনের ৭ দিনেই তারা কাজ করতেন। ৬ দিন কাজ করতেন সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত আর রবিবার কাজ করতেন বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। দুমাস পর পর দুদিনের একটা সরকারি ছুটি পেতেন শুধু, তাছাড়া এভাবেই তারা কাজ করেছিলেন পুরো দুবছর। তাকাহাশি দায়িত্ব নেন সাউন্ড আর স্ক্রীপ্টের পরিচালনার আর শিপু নেন ক্যারেক্টার ডিজাইন, স্টোরি বোর্ডিং, ব্যাকগ্রাউন্ড, ইত্য্যাদি ভিজুয়াল বিষয়গুলোর পরিচালনার। ক্যারেক্টার ডিজাইন এবং স্টোরিবোর্ড হয়ে গেলে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ৭০ জন মেম্বারদের, যারা প্রত্যেকেই ছিলেন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। তারা এনিমেশনের বিভিন্ন কাজে তাদের দুজনকে হেল্প করত। ক্যারেকটার অ্যানিমেশনগুলো কাগজে আঁকা শেষ হলে লেটাস সফটওয়্যারে রং করা হতো । এছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড, সাউন্ড-রেকর্ডিং, মিউজিক, ভয়েস, ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে ৭০ জন মেম্বার গড়ে সপ্তাহে প্রায় ২ ঘন্টা করে টানা দুবছর কাজ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে অবশ্য একজন কোরিয়ান ছাত্র , লি-জন হা তুলনামূলক অনেক বেশী সময় দিতেন । আরো যারা বেশী সময় দিতেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন কিমিকো সাকাগামী, গেনতা ইয়াসুই, প্রমুখ ।

এদিকে কাজ শুরুর ৬ মাস যেতে না যেতেই তাঁরা ভাল করেই বুঝতে পারলেন যে ৭ মিনিটের বেশি তাঁরা বানাতে পারবেন না। তারপরে স্যারকে বলতেই তিনি ৩০ মিনিট থেকে কমিয়ে ১৫ মিনিট করার সিদ্ধান্ত দেন। ছবির নাম ছিল ‘আপনের সাইকেল’। গল্পের শেষ অংশে বাংলাদেশের কিশোর আপনের সাইকেলে চড়েই জাপানে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু মাত্র ১৫ মিনিট বানানোতে আপনের আর জাপানে যাওয়া হলো না। বাদ দিতে হল অনেক মজার মজার অংশ। এদিকে আবার পরের বছরেও প্রোডাকশনের কাজ শেষ হয় না, স্যার তখন তাঁদেরকে আরো এক বছর থেকে কাজ শেষ করতে বল্লেন। কিন্তু এরফলেই দূর্যোগ নেমে আসলো শিপুর। স্কলারশিপ ক্যান্সেল হয়ে যাবে তাঁর । কারন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পড়াশোনা শেষ না হলে সেটা ফেইল হিসেবে ধরা হত সেখানে। শিপু পড়লেন ভালই বিপদে। স্যারকে বলতেই তিনি ব্যাপারটা দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। দুদিন পরেই ব্যাগ ভর্তি টাকা এনে শিপুর হাতে তুলে দিলেন তিনি। যেখানে ছিল শিপুর খাওয়া দাওয়ার খরচ সহ পুরো এক বছরে টিউশন ফি। এটা ছিল শিপুর দ্বিতীয় লোন। প্রায় দুটো লোন ইতিমধ্যে তার হয়ে গিয়েছে। এটা দেখে শিপু কাজে আরো ভালভাবে মন দিলেন, এবং সব শোধ করার প্রতিস্রুতি নিলেন।


’আপনের সাইকেল’ অ্যানিমেশন ফিল্মের জন্য নির্মিত ডিজাইন

পরের বছর ব্যাকগ্রাউন্ডের ফাইল, ক্যারেক্টার মুভমেন্টের ফাইল সব শেষ করে, সব একসাথে আফটার এফেক্টে নিয়ে বানিয়ে ফেললেন মুভি ক্লিপ। এক একটা মুভি ক্লিপ মানে একেকটা শট । কয়েকটা শট মিলে হয় একেকটা সিন । আর কয়েকটা সিন মিলে হয় একেকটা সিকোয়েন্স । সিকোয়েন্সগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাউন্ড ডিপার্ট্মেন্টে। সেখানে মারুইয়ামা ও তাকাহাশি দুজনে ইমেজের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে সাউন্ড তৈরির কাজ করেন।লজিক প্রো সফটওয়্যারে সাউন্ড বসিয়ে এডিট করেন তারা দুজন। মিউজিকে ছিলেন একজন অ্যামেরিকান ছাত্র, নাম জাসটিন ডিসেনজো। তিনি এনিমেশনের মিউজিকটা তৈরি করেছিলেন। তবে তৃতীয় বছরে কিছু সাউন্ড রেকর্ডিংযের জন্যে আবার ঢাকায় এসেছিলেন শিপু।
সব কাজ শেষ হলে, ফাইনাল-কাট-প্রোতে নিয়ে ফাইনাল এডিটিং এর কাজ করতেন শিপু । ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন শিপু এবং সে মাসেই রিলিজ পায় আপনের সাইকেল এনিমেশনটি। এরমধ্যেই এনিমেশনটি চান্স পেয়ে যায় ‘হিরোশিমা আনিমেশান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’র ‘স্টার অফ স্টুডেন্টস’ ক্যাটাগরিতে। হিরোশিমা আনিমেশান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালটি হচ্ছে বিশ্বের প্রধান ৩টি এনিমেশন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের একটি। বাকী দুটি হচ্ছে, ‘ওট্টাওয়া আনিমেশান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ ও ‘আনসি আনিমেশান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। সবার প্রশংসা পায় এনিমেশনটি। শিল্পমান ছিল এনিমেশনটির মূল লক্ষ্য। এটি ছিল সম্পূর্ন ব্যবসায়িক চাহিদামুক্ত। পরবর্তিতে এনিমেশনটি জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। এরপরে শিপু স্ক্রীপ্ট নিয়ে আরো পড়াশোনা করার জন্যে আরো দুবছর ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যান । ২০০৮ সনে ফেরার সময় স্যারদের সাথে দেখা করে আসেন এবং একটি পেইটিং দিয়ে পরে লোন শোধ করার প্রতিশ্রতি দেন।

এনিমেশন ফিল্ম মেকার হওয়ার পর শিপু যখন দেশে ফিরলেন, দেশের চিত্রটা ছিল একটু ভিন্ন। প্রযুক্তিগত দিকে থেকে পিছিয়ে থাকলেও যে বিষয়টি শিপুকে সবচেয়ে বেশি মর্মাহত করল সেটি হল প্রচুর ব্যয়বহুল ছিল এই ইন্ডাস্ট্রিটি। শিপু যখন দেশে ফিরলেন ঠিক সুবিধে করে উঠতে পারছিলেন না। এনিমেশন বানানোর জন্যে উপযুক্ত স্টুডিও, কাজ করার পরিবেশ, ফান্ড কিছুই পেলেন না। এরপর টুন বাংলা নামে একটা স্টুডিওতে যোগ দিলেন। এই কোম্পানিটির (বাংলাদেশের অন্য সব অ্যানিমেশন স্টুডিও গুলোর মতোই) এনিমেশন বানানোর থেকেও বাইরে থেকে কাজ আনাতেই বেশি আগ্রহ ছিল। শিপুর দায়িত্ব ছিল জাপান থেকে কাজ এনে দেবার। যা শিপুর পছন্দ ছিল না। পরিশেষে শিপু জাফর ইকবাল স্যারের ‘টুকি ও ঝাঁ এর (প্রায় ) দুঃসাহসিক অভিযান’ গল্পটি নিয়ে সিরিয়াল পরিচালনার কার্যক্রম হাতে নেন, যেটি প্রচার হবার কথা ছিল দীপ্ত টিভিতে। ক্যারাক্টার ডিজাইন, লোকেশান ডিজাইন, ১৩টি এপিসোডের স্ক্রিপ্ট এবং স্টরিবোর্ডও তৈরি হয়ে গিয়েছিল, এমনকি জোগাড় হয়ে গিয়েছিল ভয়েজ পারফরমারও। ভয়েজ পারফর্মারদের মধ্যে ছিলেন নাট্যকার দীপক সুমন এবং মামুনুর রশীদও। তবুও কাজ আর এগোয়নি। সাধারন মানের নাটকে যা ব্যয় হয় এনিমেশনে ব্যয় হয় তার দ্বিগুন। এত বেশি টাকা ইনভেস্ট করার রিস্ক কেউ নিতে চায় নি। আমাদের কারোরেই আর সৌভাগ্য হয়নি ‘টুকি ও ঝাঁয়ের (প্রায় ) দুঃসাহসীক অভিযান’ এনিমেশনটি পর্দায় দেখবার। শেষে স্টুডিওটি বন্ধই হয়ে যায়। এখানে থেকে তিনি কোন এনিমেশন ফিল্ম সম্পূর্ণভাবে বানাতে পারেন নি তবে এখান থেকে শিপুর যা লাভ হইয়েছিল তা হলো তিনি ‘টুন বাংলায়’ থেকে স্যারদের লোন শোধ করতে পেরেছিলেন।

শিপুর আঁকা তাঁর আত্ম-কাহিনীর চরিত্ররা

টুন বাংলা স্টুডিওটি বন্ধ হয়ে গেলে শিপু বাংলাদেশের এনিমেশন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেন। তিনি খতিয়ে দেখবার চেষ্টা করছিলেন কেন এরকম অসংখ্য স্টুডিও চালু হয়েও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি পর্যালোচনা করেন এবং ‘বাংলাদেশের অ্যানিমেশনের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষৎ’ নিয়ে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউট’ এ একটি সেমিনার করেন। পরে, সেমিনারে পঠিত ঐ অভিসন্ধটি ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউট পত্রিকা’তে প্রকাশিত হয়।

সেমিনারের জন্য গবেষণা করতে গিয়ে শিপু জানতে পারেন যে, বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হবার আগে থেকেই বাংলা অঞ্চলে অ্যানিমেশনের চর্চা শুরু হয়েছিল। ভারতের প্রথম শব্দযুক্ত অ্যানিমেশনও তৈরি হয়েছিল ১৯৩৪ সালে এই বাংলা অঞ্চলেই। আবার ভারতের প্রথম এনিমেশন সিরিয়াল ‘গায়েব আয়া গায়েব আপেয়ারস’ যা পরবর্তিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল সেটাও তৈরি করেছিলেন একজন বাঙালী চিত্রশিল্পী।

শিপুর জানা মতে স্বাধীন বাংলাদেশের তৈরি প্রথম এনিমেশন শুরু হইয়েছিল ৭০ এর দশকের দিকে। সেটি ছিল শিশুদের জন্যে নির্মিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠান ‘নতুনকুঁড়ির’ জন্য নির্মিত একটি লোগো-এনিমেশন এবং সেটি তৈরি করেছিলেন শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার। ৭০ দশকের শেষের দিকে, এবং, বা ৮০ দশকের শুরুর দিকে তিব্বত কদূর তেলর একটি বিজ্ঞাপনে একটি অপূর্ব সুন্দর এনিমেশন দেখা গিয়েছিল। যা এখনো অনেকে মনে রেখেছে। এছাড়াও আরো কিছু সুন্দর সুন্দর কাজ হয়েছিল। ১৯৯৭ এ ইউসুফ আলী নোটন, সুজন, মিঠু ও কয়েকজন তরুণ মিলে ‘ফ্লিপ স্টুডিও’ নামে একটি স্টুডিও শুরু করেছিলেন এবং ‘শান্তি’, ‘মাইক্রোফোন’ ও ‘সবুজ’ নামে চমৎকার কয়েকটি কাজ করেছিলেন। এরপর আরো অনেক এনিমেশন স্টুডিও চালু হয় বাংলাদেশে। শিল্পী রেজাউল করীম ও নাসির বিশ্বাস ইউনেস্কোর জন্য একটি দ্বিমাত্রিক অ্যানিমেশন তৈরি করেছিলেন, যেখানে আজকের সুনামধন্য অ্যানিমেশন নির্মাতা ও স্টুডিও ড্রিমার ডানকী এর প্রতিষ্ঠাতা মশিউর রহমান রানা কাজ করেছিলেন । ১৯৯৮ সনে মেজবাউর রহমান সুমন ( এখনকার টিভি-নাট্য ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা ), সব্যসাচী মিশ্রী এবং তাঁদের দল মিলে ‘গোপাল ভাঁড়’ তৈরি করেছিলেন। ১৯৯৯ সনে সফট-এজ নামে একটি এনিমেশন কোম্পানি থেকে “রোবটদের গ্রহে একদিন” শিরোনামে জনাব জাভেদ মাহমুদ একটি ত্রিমাত্রিক এনিমেশন তৈরী করেন। বহুল পরিচিত ‘মন্টু মিয়াঁর অভিযান’ ও তৈরি হয়েছিল এই স্টুডিও থেকেই । একবিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে এযাবৎ কালের মধ্যে সর্ববৃহৎ এনিমেশন স্টুডিও ‘গ্রীনফিল্ডের জন্ম হয়েছিল। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনী ‘বুগাবুগা’ নির্মিত হয়েছিল সেখান । এছাড়াও কানাডিয়ান একটি কোম্পানির জন্য ‘সুপার লিলি’ নামে ১৩ মিনিট দৈর্ঘের ১৫৬ পর্বের একটি কাজে হাত দিয়েছিল এ কোম্পানিটি। ২০০৫ সালে এই স্টুডিওটি মিনা কার্টুন তৈরির দায়িত্ব পান। তবে এর কিছুদিন পর এটিও বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৪ এর দিকে এসে ইউএসএইড- এর সহযোগিতায় ‘সিসিমপুর’ নামে একটি শিক্ষামূলক কার্যক্রম চালু হয়েছিল। অনেক গুনী গুনী শিল্পীরা এখানে অ্যানিমেশন তৈরি করার জন্যে যোগ দেন। এবং আরো কিছু এনিমেটর গ্রীনফিল্ড সহ অন্যান্য স্টুডিও ছেড়ে এসে যোগ দেন এখানে। এদের মধ্যে আহমেদ মাসুম চিশতি, সুমন ও মানিকের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। তবে এ স্টুডিওটিরও যাত্রা ছিল ২০০৯ পর্যন্তই । এরপর বন্ধ হয়ে যায় স্টুডিওটি। এছাড়াও বাংলাদেশে আরো ছোট বড় অনেক এনিমেশন স্টুডিও চালু হলেও কোন না কোন কারনে তা বন্ধ হয়ে যায়। ‘টুন বাংলা’ র যাত্রাও ছিল মাত্র ৭ বছর। ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করলেও এর যাত্রা শেষ হয়ে যায় ২০১৪ তে এসে।

কিছু কিছু স্টুডিও চালু হলেও কালের বিবর্তনে বন্ধ হয়ে যায় তাদের বেশিরভাগই। অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রিতে ধ্বস নামার অন্যতম কারন গুলো হলো হতে পারেঃ

১। এনিমেশন বানানো প্রচুর ব্যয় বহুল, তাই অনেকে অনেক প্রজেক্ট চালু করলেও পরে আর টিকে থাকতে পারেনা।

২। বিদেশী স্টুডিওর আউটসোর্সের উপর নির্ভরশীলতা।

৩। দ্বিতীয়ত এ কাজে স্পন্সর পাওয়া যায় না, তাই এত টাকার রিস্ক নেওয়া অনেকের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

৪। কিছু স্টুডিও চালু হলেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে অন্য কাজে (এনিমেশন বহির্ভূত বিষয়ে )। অ্যানিমেশনকে উপলক্ষ্য করে লোন নিয়ে তা লাগায় অন্য কাজে।

৫। এনিমেশন চর্চার ও শিক্ষার অভাব।

৬। বেশিরভার স্টুডিও ফোকাসলেস, এনিমেশন বানানোর থেকেও বাইরে থেকে কাজ আনতে তারা বেশি আগ্রহী। ফলে ঐ স্টুডিওগুলোকে কখনো ফ্লাশ অ্যানিমেশন, কখনো মায়া অ্যানিমেশন, কখনো টুনবুম অ্যানিমেশন, কখনো স্টপমোশান অ্যানিমেশন, এমনকি কখনো কমিকসও করতে হয়। তাই কোনদিকে পরিপূর্ণ ভাবে যেতে না পেরে অ্যানিমেটরদের এবং স্টুডিওর মানের কোন উন্নতি হয় না এবং বন্ধ হয়ে যায় স্টুডিও গুলো।

৭। স্টুডিওর সংখ্যা খুব কম, এনিমেশনের কাজ জানে হাতে গোনা কিছু মানুষ। তাই যখন নতুন স্টুডিও চালু হয়, ভাল সুযোগ পেলেই তারা চলে যায়। এভাবেই অচল হয়ে যায় অনেক স্টুডিও।

৮। বাংলাদেশে কপিরাইট ক্লেম খুব একটা শক্ত পোক্ত নয়। একটি নতুন এনিমেশন বানানো হলে সেই কার্টুন ছবি যে কোন জায়গায় অনুমতি আর অর্থ ছাড়াই ব্যবহৃত হয়। এজন্যে এখানেও এনিমেশন স্টুডিও গুলোর লোকসান হয়।

শিপু দেখলেন অ্যানিমেশন শেখার জায়গা কম বলেই এই শিল্পটা ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না। যদি ভাল ভাল কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকত, বাংলাদেশে অ্যানিমেশনের চিত্রটাই হয়তো পালটে যেত। এরকম চিন্তা থেকেই তিনি জয়েন করলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসএ। তাঁর স্বপ্ন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিপূর্ণ একটি এনিমেশন বিভাগ খোলার। যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে দেখাবেন উন্নত মানের এনিমেশন বানানোর রাস্তা । আর এই শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের আগামী অ্যানিমেশন শিল্প।

 

লেখা: কানিজ ফাতেমা

সম্পাদনা: মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম

 

[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]

Jun 28, 2018কানিজ ফাতেমা
বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকাতির আড়াই বছর - শেষ পর্বষড়যন্ত্রের ইতিহাস
You Might Also Like
 
সেন বংশের ইতিহাস- শেষ পর্ব
 
ইন্সটাগ্রামে ঢুকতে পারছেন না ব্যবহারকারীরা

Leave a Reply Cancel reply

কানিজ ফাতেমা
June 28, 2018 জীবন, তারকা, সাফল্যঅ্যানিমেশন, অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রি, আপনের সাইকেল, ইউল্যাব, এ.এফ.এম. মনিরুজ্জামান, এস.এম. সুলতান, কানিজ ফাতেমা, চিত্রশিল্পী, টুন বাংলা, থেকে, ফিল্ম, বাংলা, বাংলাদেশ, মেকার, শিপু456
লেখাটা শেয়ার করুন
0
GooglePlus
0
Facebook
0
Twitter
0
Digg
0
Delicious
0
Stumbleupon
0
Linkedin
0
Pinterest
ভাইরাল ভিডিও
সাবসক্রাইব

আমাদের সঙ্গে থাকতে সাবসক্রাইব করুন।

সম্পাদকের বাছাই
সাতটি বিষয় যা প্রত্যেক বাবারই উচিত তার ছেলেকে শেখানো
কোমর ও পা ব্যথা থেকে মুক্তির ছয় উপায়
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে অংশগ্রহণকারীদের অজ্ঞতা
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে অংশগ্রহণকারীদের অজ্ঞতা
বিদেশে বাঁধাকপি (পাতাকপি) রপ্তানি
বিদেশে বাঁধাকপি (পাতাকপি) রপ্তানি
সম্পর্কে মানসিক অত্যাচারের লক্ষণ এবং উত্তরণের উপায়
সর্বাধিক পঠিত
হিজরাদেরকে ব্যবহার করা হয় যৌন চাহিদা পূরণে
26,001 views
রাতে ঘুম না আসার কারণ, ফলাফল এবং প্রতিকার
25,701 views
পুরুষের বীর্য এত উপকারী!
16,534 views
জার্মান নাগরিক হতে যা করতে পারেন
10,560 views
প্রতিদিনের সঠিক খাবার তালিকা তৈরী করে দেবে মোবাইল অ্যাপ
প্রতিদিনের সঠিক খাবার তালিকা তৈরী করে দেবে মোবাইল অ্যাপ
9,428 views
ভিডিও: প্রবাস জীবন
সর্বাধিক আলোচিত
দেশের সেরা বারো ইউটিউবার!
দেশের সেরা এগারো ইউটিউবার!
2 Comments
সেদ্ধ ডিমের এই ডায়েট ১০ কেজি ওজন কমাতে পারে মাত্র ১৪ দিনে!
সেদ্ধ ডিমের এই ডায়েট ১০ কেজি ওজন কমাতে পারে মাত্র ১৪ দিনে!
2 Comments
স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৭ এ ভয়াবহ কারিগরী ত্রুটি!
1 Comment
আলেপ্পোর ৭ বছর বয়সের বেনা আল-আবেদের খোঁজ…
1 Comment
হিজাব ছাড়া ছবি তোলায় সৌদি নারীর মৃত্যুদণ্ডের দাবি!
1 Comment
সাম্প্রতিক মন্তব্য
  • Mohib on চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট সুন্দর করে লেখার পাঁচ উপায়
  • Tapashi on আমেরিকায় যাঁরা পড়তে আসছেন – কালচারাল শক নিয়ে কিছু পরামর্শ
  • SMN ZAMAN on ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উদ্যোক্তা ই-সেবী
  • স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট নাইনে আগুন - ভেরিফাইড প্রেস on স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৭ এ ভয়াবহ কারিগরী ত্রুটি!
  • Tareq on বিদেশে কচু রপ্তানি : মেহেদি মাসুদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়
Follow @VP_English Tweets by VP_English
RSS English
  • Returning home with shattered dreams
  • “Greening ULAB”, a small footstep towards a plastic free nation
  • Six videos that explain Rohingya crisis
ভিজিটর
Flag Counter
2017 © ভেরিফাইড প্রেস