মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো অপরাধ, আর সে অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটনা বড় ধরনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নিজের বন্ধুর পক্ষ নিতে গিয়ে মডেল সোহানা সাবা একটি দুর্ঘটনাকে অনেক হালকা করার চেষ্টা করেছেন, যেটা মোটেই কাম্য নয়।

মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর শাস্তি কী? জার্মানি এবং বাংলাদেশ – দুই দেশেই শাস্তির বিধান রয়েছ। জার্মানিতে বড় অংকের আর্থিক জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল এমনকি জেলও হতে পারে। আর কেউ যদি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় কাউকে আহত বা মেরে ফেলেন, তাহলে শাস্তির পরিমাণ অনেক বেশি।
ঢাকায় সম্প্রতি এক সড়ক দুর্ঘটনার পর মদ্যপ চালকের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। গত ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বসুন্ধরা শপিংমলের সামনের সড়কে একটি গাড়ি প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলামের মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনায় তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। তবে তিনি সবচেয়ে গুরুতর আঘাত পান মাথায়। বর্তমানে জিয়া একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হে আল্লাহ তুমি জিয়া ভাইয়ের সুস্থতা দান করো, .. আমিন#ziaislam #জিয়াইসলাম #roadaccident #Dhaka pic.twitter.com/s9Lrp3mLte
— palash khan (@palashkhannews) January 10, 2017
জিয়াকে যে গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে সেটি মডেল কল্যাণ কোরাইয়ার বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম। কল্যাণ সেরাতে দুর্ঘটনার পর জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। আর তখন এক সাংবাদিককে দুর্ঘটনা ঘটানোর কথা জানিয়েছেন বলে লিখেছে ঢাকার পত্রিকাগুলো। সেসময় তিনি মাতাল ছিলেন বলেও দাবি উঠেছে। পুলিশ ইতোমধ্যে কল্যাণকে গ্রেপ্তার করেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই দুর্ঘটনা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে তা থেকে কয়েকটি প্রশ্ন তোলা যায়:
১. জিয়ার মোটর সাইকেলকে কি সত্যিই কল্যাণ কোরাইয়ার গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে?
২. দুর্ঘটনার সময় কল্যাণ কোরাইয়া কি নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন?
৩. কল্যাণ কি সেসময় মাতাল ছিলেন?
৪. যে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে গাড়ির গতিসীমা কত? তিনি কত দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলেন?
৫. দুর্ঘটনা ঘটার পেছনে গাড়ি চালকের দোষ ছাড়া আর কোন কারণ কি ছিল?
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা পুলিশের তদন্ত দলের দায়িত্ব। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরাও তদন্ত করে লিখতে পারেন। আর শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব আদালতের। তবে এখানেও কথা থেকে যায়, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং দুর্ঘটনার শাস্তি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে চিন্তা করলে খুবই নগণ্য। এই শাস্তির মাত্রা সময়োপযোগী করে বাড়িয়ে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে।
সমস্যা হচ্ছে, কল্যাণের বন্ধুরা দুর্ঘটনার বিষয়টিকে হালকা করার চেষ্টা করছেন। অথচ দুই সন্তানের জনক জিয়া এখনো হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আর সেই হালকা করার চেষ্টায় সর্বশেষ যোগ হলেন মডেল সোহানা সাবা। তিনি এক আবেগি ফেসবুক পোস্টে কল্যাণের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে পরস্পরবিরোধী কিছু কথা লিখেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, কল্যাণ ভালো মানুষ বলেই রাতের বেলা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন। এই অংশটুকু অবশ্য পরবর্তীতে সম্পাদনা করে লিখেছেন, কল্যাণের গাড়ি অন্যত্র দুর্ঘটনায় পড়ে এবং তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন আরেক বন্ধুকে দেখতে!
শুধু তাই নয়, সাবা তার ফেসবুক পোস্টে শুরুতে লিখেছিলেন, ‘’এদেশে তো এমন আইনও নেই যে মদ খেয়ে গাড়ি..বাইক..ট্রাক..বাস..চালানো যাবেনা..তাহলে হয়ত রাতে ১০ভাগ গাড়িই চলতো না..।” নিজের বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনাটিকে গুরুত্বহীন করার এর চেয়ে হীন চেষ্টা আর কী হতে পারে!
সোহানা সাবা নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসটিকে বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, তিনি অন্ধের মতো বন্ধুর পক্ষ নিতে গিয়ে অনেক ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। আর সেগুলো ঢাকতে গিয়ে এখন বিষয়টি আরো জটিল করে তুলছেন। ফলে কল্যাণ রাতের বেলা অপরাধবোধ থেকে বা অনুতপ্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়ে অপরাধ স্বীকার করে যেটুকু মানবিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন, সেটাও এখন গুরুত্ব হারাচ্ছে।
শুরুতে অপরাধ স্বীকার করে নিলে কেউ মাফ পেয়ে যায় না, তবে জার্মান আইনে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশেও সম্ভবত সেরকম বিধান আছে। কল্যাণ যদি এখন অপরাধ অস্বীকার করেন, আর তদন্তে যদি প্রমাণ হয় তিনি অপরাধী, তাহলে তার কঠোরতম শাস্তি দাবি করছি।
আপনি কি আমার সঙ্গে একমত? লিখুন মন্তব্যে।
Leave a Reply