শুধুমাত্র অভিজ্ঞ সেনা সদস্যরাই পারে যেকোন স্থানে যেকোন সময় যেকোন ভাবে চোখ বন্ধ করে হালকা ঘুমিয়ে নিজের ক্লান্তিটুকুন দূর করতে। আর তাও সম্ভব শুধুমাত্র তাদের সামরিক প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা থেকেই। তবে আজ থেকে আপনিও হয়তো কিছুটা পারবেন, যদি আমাদের এই লেখাটি অনুসরণ করেন।

যে কোন স্থানে, যে কোন পরিস্থিতিতে ঘুমোতে পাড়া নাকি সৃষ্টিকর্তার এক অশেষ নিয়ামত। চাইলেই যেমন কারো কোটি টাকার পালঙ্কে ঘুম আসেনা তেমনি চাইলেও কেউ জঙ্গলে শুয়ে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে পারে না। তবে এইদিক থেকে অভিজ্ঞ সেনা সদস্যরা। কারণ তাদের সামরিক প্রশিক্ষণটাই এমন হয় যে তাকে স্থান, কাল, পাত্র ভুলে যে কোন জায়গায় ঘুমিয়ে ক্লান্তি দূর করে পূর্ণ উদ্যামে কাজ করতে সাহায্য করে।
ঘুমাতে চাওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে মস্তিষ্ককে চাপ মুক্ত রাখতে হবে। অর্থাৎ ঘুমাতে যাবার আগে ঝেড়ে ফেলতে হবে সবরকম চিন্তা। সারাদিন কি করলাম আর কি করবো, কি পেলাম আর কি পেলাম না সব ভুলে বিছানায় বা ঘুমানোর জায়গায় হেলিয়ে পড়ে সারাদিনের সব ভুলে চোখ বন্ধ করে দশ থেকে এক পর্যন্ত গুনতে থাকুন। কখন ঘুমিয়ে যাবেন বুঝতেও পারবেন না। আপনার মস্তিষ্ককে চাপ মুক্ত রাখতে সব ভুলে যান। এই অবস্থায় ১ ঘন্টার ঘুম একরাত ঘুমের মত অনুভুতি দেবে আপনাকে। যা আপনার ঘুম পরবর্তী কাজে প্রভাব ফেলবে।
ঘুমানোর জন্য শারীরিক কিছু ব্যাপারও আছে। যেমন, মাথার নীচে কিছু দিয়ে মাথা উঁচু করে ঘুমালে ঘুম দ্রুত আসে ও ভালো ঘুম হয়। এক্ষেত্রে ঘুমানোর জন্য মাথার নীচে ফোম বা সোলা জাতীয় কিছু দেওয়া উত্তম। আমরা দীর্ঘ ভ্রমণের সময় অনেকে বিশেষ ধরণের U আকৃতির বালিশ ব্যবহার করি। যা ভ্রমণের সময় ঘাড়ের নীচে দিলে অনায়েসে আপনার ঘুম আসবে। কখনো যুদ্ধের ময়দান বা প্রশিক্ষণকালীন সময়ে আর্মি বা সেনা সদস্যদের কাছাকাছি থাকলে লক্ষ্য করবেন তারা তাদের পীঠের ব্যাগ-প্যাক মাথার নীচে দিয়ে বা তাতে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে। এর ফলে তাদের চোখে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসে। মাথার নীচে কিছু দেওয়া থাকলে মাথা উঁচু হয়ে থাকে, নাক দিয়ে সহজের অক্সিজেন প্রবেশ করে শরীরের প্রয়োজনীয় অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক থাকায় দ্রুত ঘুম চলে আসে চোখে।
আমরা অনেকেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাবার পর ঘুমাতে পারিনা। বিশেষ করে নতুন শহর বা নতুন দেশ হলে এমন ঝামেলার মুখোমুখি হই আমরা। নতুন দেশের ক্ষেত্রে ঝামেলাটা বেশী হয় যখন সময়ের পার্থক্য খুব বেশী থাকে। সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য আশার আলো হতে পারে নতুন দেশে যাবার আগের পূর্ব প্রস্তুতি। যেই দেশে যাবেন সেই দেশে যাবার আগে সেই দেশে সময়ের পার্থক্য সম্পর্কে আগাম ধারণা নিয়ে সেই মত ঘুমানোর অনুশীলন বাসাতেই করতে হবে। পুরোপুরি না হলেও আংশিক ভাবে সেই দেশের সময় মানা শুরু করতে হবে। এতে করে সেই দেশে যাবার পর ভোগান্তি কিছুটা কমবে। কারণ, নতুন দেশের নতুন সময়ে ঘুমানোর আগাম প্রস্তুতি আপনি নিচ্ছেন।
ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে আমাদের অধিকাংশ কাজ ডিভাইস নির্ভর। এর ফলে আমাদের পরিশ্রম করার পরিমাণ একদমই কমে গিয়েছে। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করছি আমরা। ডিভাইসের পর্দা থেকে বের হওয়া নীল আলো ক্ষতি করছে ঘুমের। আর ডিভাইস ব্যবহার করে সবকিছু করায় শারীরিক পরিশ্রমটা সেভাবে হচ্ছে না। পরিশ্রম করে ক্লান্ত না হলে ঘুমটাও আরামের হবেনা; এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের প্রত্যেকের পরিশ্রম করা উচিত। সেটা কাজ করে হোক বা ব্যয়াম করেই হোক। সারাদিন বসে বসে আরামের কাজ না করে রাতে ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য হলেও কিছু ব্যয়াম করে ক্লান্ত হওয়া উচিত। এতে আমাদের শরীরও ভালো থাকবে আর আমাদের ঘুমের সময় ঘুমটাও ভালো হবে।
ঘুম না আসায় অনেকেই ঘুম আসার সহায়ক হিসেবে বিভিন্ন ওষুধ সেবন করেন, যা কখনোই ঠিক না। এর ফলে আমাদের শারীরিক ক্ষতি যেমন হচ্ছে তেমনি মানসিক ক্ষতিও সাধন হচ্ছে। আবার অনেক ঘুমের সহায়ক হিসেবে বিভিন্ন মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে; যা কোনো সমাধানই নয়। বরং এই জিনিসগুলো আমাদেরকে আরও ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। তাই ঘুমের জন্য ওষুধ বা মাদকের দিকে যাওয়াটা একেবারেই উচিত নয়।
সম্পাদনা: মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম
[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]
Leave a Reply