আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কোনো না কোনো ভাবে চিনির উপস্থিতি থেকেই যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই এটা জানিনা যে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি খেলে আমাদের কী কী ক্ষতি হতে পারে।

আমরা অনেকেই প্রতিদিন চা, কফি বা চিনি আছে এমন কোনো নাস্তা দিয়ে আমাদের দিনটি শুরু করি। চিনি খাদ্য তালিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কিন্তু চিনির কতগুলো ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেমন: স্থুলতা বৃদ্ধি, শারীরিক অসুস্থতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
চিনির নিয়মিত ব্যবহারে মানুষের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব অনেক বেশি স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই চিনি খাওয়া বন্ধ করার মাধ্যমে আপনি পরিবর্তন গুলো নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।
এখানে এমন সাতটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কেনো আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য চিনি খাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন ।
১. শক্তি বৃদ্ধি:
অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও, চিনি খাওয়া বন্ধ করলে আপনার শক্তি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এটা সত্যি যে, প্রতিদিন চিনি খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যাবে। রক্তে প্রয়োজন এর তুলনায় চিনির পরিমাণ বেশি হলে বিভিন্ন রকম সমস্যার দেখা দিবে। যখন আপনি চিনি খাওয়া বন্ধ করবেন তখন আপনার শরীর আরও কার্যকরী ভাবে কাজ করবে। আপনার শরীর সারাদিন ধরে সতেজ থাকবে ।
২. ওজন হ্রাস:
বতর্মান যুগে মানুষ ফিটনেস ধরে রাখার জন্য কত কিছুই না করছে! কত জায়গায় টাকা খরচ করছে। বিভিন্ন জায়গায় টাকা খরচ না করে যদি দৈনন্দিন রুটিন থেকে চিনি বাদ দেওয়া শুরু করেন তাহলেই অনেকটা সমস্যার সমাধান হবে। মিষ্টি খাওয়া বাদ দেওয়ার কারণে আপনার ক্ষুধা কমে যাবে। প্রয়োজন এর অতিরিক্ত ক্ষুধা থাকবে না। এতে করে শরীরের ওজন অনেক টাই কমে যাবে। মেদ কমে যাবে। শরীরের শক্তি সারাদিন ধরে ঠিক থাকবে।
৩. ভালো ঘুম:
রক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে শরীরে অস্বস্তি বোধ হয়। রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হয় না। অনেকের অনিদ্রা রোগ হয়। এক্ষেত্রে চিনি অনিদ্রার দ্বিতীয় প্রধান কারণ। আপনার শরীরে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে আপনার শরীর তার স্বাভাবিক তালটি ফিরে পাবে। কোনো রকম অস্বস্তি হবে না। এর ফলে আপনার রাতের ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণে হবে।
৪. শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম:
আমাদের শরীরে দৈনিক বিভিন্ন ধরনের জীবাণু আক্রমণ করে। আমাদের ইমিউন সিস্টেম এসব জীবাণুর হাত থেকে আমাদের শরীর কে রক্ষা করে। চিনির অতিরিক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী সেবন আমাদের শরীরের ইমিউনিটি কমিয়ে দিতে পারে। এতে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে।
৫. ভাল ত্বক:
আপনার ত্বক এর অবস্থা সরাসরি আপনি যে খাবার খান তার সাথে সম্পর্কিত। যখন আপনি চিনি খাওয়া বন্ধ করবেন তখন আপনার ত্বক পুনরুজ্জীবিত হতে শুরু করবে। ব্রণ অদৃশ্য হবে। কোনো রকম মেকআপ ছাড়াও নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মনে হবে।
৬. মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল করে:
আপনি কি জানেন যে চিনি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে? গবেষণায় দেখা যায় যে আপনি যদি চিনি খাওয়া বন্ধ করেন তাহলে আপনার মানসিক অবস্থা ভালো থাকবে এবং সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে। সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ।
৭. নিজেকে অল্পবয়স্ক বলে মনে হবে:
চিনি খাওয়ার সাথে নিজেকে অল্পবয়সী বা বেশি বয়সী বোধ করার কি সম্পর্ক এটাই ভাবছেন তো?
২০১১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের তুলনায় যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই তাদের অল্পবয়সী বলে মনে হয়। চিনি ত্বকের কোলাজেনের সাথে যুক্ত হয়। আপনার চেহারা কে নিস্তেজ করে দেয় ফলে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে। চিনি খাওয়া বাদ দিলে আপনার শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং চেহারা থেকে বয়সের ছাপ দূর হবে।
৮. হৃদরোগ এর ঝুঁকি হ্রাস:
গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। রক্তে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হলো কোন খাবার খাওয়ার পর তা কতটা বেশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় তার আপেক্ষিক পরিমাপ। চিনি খাওয়া বন্ধ করলে অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং চর্বি থেকে শরীর কে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এতে আমাদের হৃদয় সুরক্ষিত থাকবে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে।
৯. আপনি আপনার লিভারকে রক্ষা করতে পারবেন:
অতিরিক্ত চিনি লিভারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রতিদিনকার খাবারে শর্করার পরিমাণ কমানোর মাধ্যমে আপনি আপনার যকৃতকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
১০. কিডনির পাথর প্রতিরোধ:
চিনি থাকা বিভিন্ন পানীয় কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি ২৫% বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে কোমল পানীয় এই ঝুঁকি ৩৩% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। অর্থাৎ আপনি যদি চিনি খাওয়া বন্ধ করেন তাহলে আপনার কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনাও কমে যাবে।
লেখা: শামীমা নাসরিন মুমু
সম্পাদনা: মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম
[[ লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়। ]]
Leave a Reply