জার্মানির নাগরিকত্ব নিয়ে যত দ্বিধা আছে সব ঝেড়ে ফেলুন! এই প্রতিবেদনে জার্মানির নাগরিকত্ব পাওয়া বা সেখানে দীর্ঘদিন থাকার জন্যে যা যা জানা বা করা দরকার তা লেখা হয়েছে৷

জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে গেলে বেশ মজার একটি তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে স্পষ্ট করে একটি সতর্কবার্তা লেখা যার বাংলা করলে দাঁড়ায় যে “জার্মানির নাগরিকত্ব আইন বেশ জটিল”। পাশাপাশি এটাও উল্লেখ করা রয়েছে যে তারা কেবলমাত্র সেসকল প্রশ্নেরই জবাব দেয় যেসব প্রশ্ন অনেক বেশিবার জিজ্ঞেস করা হয়। তবে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। নাগরিকত্ব বা থাকা সংক্রান্ত সকল তথ্য স্পষ্টভাবে ভেরিফাইড প্রেসের পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করতেই আমাদের এই প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি তৈরিতে জার্মান ওয়েবসাইট দ্যা লোকাল -এ প্রকাশিত কিছু তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷
একজন জার্মান নাগরিক হতে চাইলে সাধারণত আপনি বর্তমানে যে দেশের নাগরিক সে দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে। তবে এটা না করেও চাইলে স্থায়ীভাবে জার্মানিতে থাকার অনুমতি পাওয়ার উপায় রয়েছে!
জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বা দীর্ঘদিন থাকতে যা করতে হবে
জার্মানিতে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পাবার জন্যে সবার শুরুতেই যেটি প্রয়োজন সেটি হলো জার্মান ভাষায় দক্ষতা। পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই নিজেকে চালানোর মতন পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা মানে চাকুরি বা ব্যবসা ও স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে। তবে কোনো প্রকার অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা চলবে না! আপনি চাইলে “ইসি রেসিডেন্স”-এর জন্যে আবেদন করতে পারেন। তবে এজন্যে আপনাকে জার্মানিতে কমপক্ষে পাঁচ বছর থাকতে হবে এবং কোনো প্রকার সাধারণ রেসিডেন্স পারমিট (যেমন: ওয়ার্ক পারমিট) থাকতে হবে। “ইসি রেসিডেন্স”-এর বিশেষত্ব হলো এই পারমিট থাকলে আপনি কেবলমাত্র জার্মানিই না; চাইলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত যেকোনো দেশে থাকতে পারবেন!
“সেটেলমেন্ট পারমিট” নামে জার্মানিতে বসবাসের আরেকটি পারমিট রয়েছে। তবে এটি আপনাকে ইসি রেসিডেন্সের মতন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাবার সুযোগ দেবে না। মাঝেমধ্যে পাঁচ বছরের মধ্যেই পাওয়া যায় এই সেটেলমেন্ট পারমিট। সেটেলমেন্ট পারমিটের জন্যে জার্মানীতে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের গ্র্যাজুয়েশনের দুই বছর পর আবেদন করতে পারে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের “ব্লু কার্ড” রয়েছে এমন ব্যক্তিরা ৩৩ মাস কাজ করার পর পারমেনান্ট রেসিডেন্স পেতে পারে। তবে জার্মান ভাষা শেখার বি১ সার্টিফিকেট থাকলে ২১ মাসের মাথাতেই স্থায়ী রেসিডেন্স প্রদান করা হয়।
যেসকল ব্যবসায়ী অনেক অল্প সময়ের মধ্যেই সফলতার সাথে নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারেন তাদের ক্ষেত্রে মাত্র তিন বছরের মাথায় আবেদন করার সুযোগ দেয় জার্মানি। পাশাপাশি চাকরির জন্যে আমন্ত্রণপ্রাপ্ত যোগ্যতাসম্পন্ন অভিবাসী যেমন বিজ্ঞানী, গবেষকদেরকে জরুরী ভিত্তিকে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি প্রদান করা হয় জার্মানিতে।
জার্মানির নাগরিকত্ব পেতে যা করতে হবে
জার্মানির নাগরিকত্ব পেতে চাইলে আপনাকে জার্মানিতে অন্তত আট বছর বৈধভাবে থাকতে হবে। তবে আপনি চাইলে এটিকে সাত বছরে নিয়ে আসতে পারেন। সেজন্যে আপনাকে ভোক্সোস্যুলে (এক প্রকারের কম্যুনিটি কলেজ) জার্মান ভাষা শেখার একটি কোর্স করতে হবে। মোট কথা, জার্মানির নাগরিকত্ব পেতে চাইলে বা সেখানে দীর্ঘদিন থাকতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে জার্মান ভাষা জানতে হবে।
জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে যে, জার্মানিতে কথা বলার ক্ষমতা থাকাটা অতীব জরুরি। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে জার্মানির একটি অংশ হতে চাইলে জার্মান ভাষায় যোগাযোগ করতে পারাটা খুবই প্রয়োজন।
কিন্তু জার্মান ভাষার উপর কতটা দখল থাকতে হবে?
পর্যাপ্ত পরিমাণ জার্মান ভাষা জানার মানে এই যে আপনি জার্মানিতে প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় সকল যোগাযোগ জার্মান ভাষায় চালিয়ে যেতে পারবেন। প্রশাসনিক যেকোনো কাজে জার্মান ভাষা ব্যবহারের সামর্থ্য থাকতে হবে। আপনার সমবয়সী বা একই শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে এমন কারো সাথে জার্মান ভাষায় কথাবার্তা বলার সক্ষমতা থাকতে হবে। কথা বলার পাশাপাশি জার্মান ভাষায় লিখতেও জানতে হবে।
সবকিছুর উর্ধ্বে, আপনাকে এটা প্রমাণ করতে হবে যে আপনি নিজের সকল আর্থিক চাহিদা পূরণে সক্ষম এবং কোনোপ্রকার অপরাধকর্মের সাথে কখনো জড়িত ছিলেন না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের কোনো দেশ থেকে আগতদের ক্ষেত্রে তাদের বর্তমান নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে। তবে আপনি যে দেশের নাগরিক সেই দেশ যদি নাগরিকদেরকে নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের সুবিধা প্রদান না করে সেক্ষেত্রে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ না করলেও হবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশসমূহ তাদের নাগরিকদেরকে একই সাথে জার্মানির এবং তাদের দেশের নাগরিকত্ব রাখার সুবিধা দেয়।
এসবের পাশাপাশি স্বাভাবিক নাগরিকত্বের একটি পরীক্ষায় আপনাকে পাশ করতে হবে। এই পরীক্ষায় দেশটির আইন, ইতিহাস ও মানুষদেরকে নিয়ে মোট ৩৩টি প্রশ্ন থাকবে। ভাষাগত দক্ষতার মাত্রায় এটি থাকবে বি১ মানের। আপনাকে অবশ্যই ৩৩টি প্রশ্নের মধ্যে অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ অন্তত ১৭টির সঠিক জবাব দিতে হবে।
সবশেষে নাগরিকত্ব লাভের জন্যে আপনাকে ২৫৫ ইউরোর একটি ফি প্রদান করতে হবে।
বিবাহিত হলে বা বাচ্চা থাকলে যা করতে হবে
আপনি ইতোমধ্যে জার্মানির একজন নাগরিকের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে থাকলে নাগরিকত্বের ব্যাপারটি বেশ সহজ হয়ে যায়। আবেদনের সময় স্বামী বা স্ত্রীকে অবশ্যই বৈধভাবে জার্মানীতে তিন বছর থাকতে হবে। বিয়ের দুই বছর পর নাগরিকত্বের জন্যে আবেদন করা যাবে। জার্মান ভাষায় দখল এবং কোনোপ্রকার অপরাধকর্মের রেকর্ড না থাকার মতন সাধারণ ব্যাপারগুলি এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের জন্ম জার্মানির ভেতরে বা বাইরে যেখানেই হোক না কেন, মা-বাবার মধ্যে একজনও যদি জার্মান নাগরিক হয় তবে সে জার্মানির নাগরিকত্বের জন্যে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। তবে ২০০০ সালের পহেলা জানুয়ারী বা এর পর জার্মানীতে জন্ম নেওয়া জার্মানীর নাগরিকত্ব নেই এমন বাবা-মায়ের সন্তানদের ক্ষেত্রে তারা বিশেষ পরিস্থিতিতে নাগরিকত্বের জন্যে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। তাদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের মধ্যে যেকোনো একজনকে অন্তত আট বছরের জন্যে জার্মানিতে বৈধভাবে থাকতে হবে এবং বসবাসের স্থায়ী অনুমতিপত্র থাকতে হবে।
তবে সন্তানের যদি একাধিক নাগরিকত্ব থেকে থাকে সেক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়স পর্যন্ত তারা কোন নাগরিকত্বটি রাখতে চায় সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]