বাংলাদেশী অ্যাপ ডেভেলপার মুবিন উল আলমের তৈরি করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যাপ জিরিয়ান এখন সমাদৃত হচ্ছে দেশের ভেতরে এবং বাইরে সবজায়গায়।

বর্তমানে প্রযুক্তি বিশ্বে জয়জয়কার চলছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নির্মিত অ্যাপ, রোবট ও নানান সার্ভিসের মাধ্যমে মানুষের প্রতিদিনের জীবন হচ্ছে আরও সহজ। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মেডিসিন, সাইকোলজি, জেনেটিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স ও অন্যান্য বিভাগে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গুগল, অ্যামাজন, আলিবাবা, মাইক্রোসফট, ফেসবুক, আইবিএম, এনভিডিয়া এর মত বড় বড় বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন সেবা ও ডিভাইস বানিয়ে যাচ্ছে।
অন্যান্য দেশের মত আমাদের বাংলাদেশেও বর্তমানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স একটি হট টপিক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে দেশেই করা হয়েছে কাজ! অ্যান্ড্রয়েডের জন্য রয়েছে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া অ্যাপ জিরিয়ান।
জিরিয়ান মূলত একটি আর্টিফিশিয়ালি ইন্টেলিজেন্ট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। যেটি মানুষের কথা বুঝতে পারে এবং বিভিন্ন কমান্ড অনুসারে কাজ করে দিতে পারে। পাশাপাশি ইউজারের সাথে গল্পও করতে পারে। জিরিয়ান আপটি ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করে এবং সবসময় ব্যবহারকারীর কথাবার্তা শুনতে থাকে। এর ফলে বারবার লকস্ক্রীন খুলে অ্যাপ চালু করার প্রয়োজন হয় না। তবে এই ফিচারটি চাইলে চালু বা বন্ধ করা যায়। জিরিয়ান অ্যাপে ভয়েসের মাধ্যমে কমান্ড দিয়ে নিচের কাজগুলো করানো যায়:
- ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ও ফ্ল্যাশলাইট চালু বা বন্ধ করা
- কোন নাম্বারে কল করা
- ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা
- ইমেইল পাঠানো
- হিসেব-নিকেশ করা
- মিউজিক প্লেয়ার চালু বা বন্ধ করা
- মোবাইলের ডিভাইস, লোকেশন, মেমোরী, আপ ও নেটওয়ার্কের তথ্য জানা
- সময় ও তারিখ জানা
- অ্যাপ চালু বা বন্ধ করা
এসব সাধারণ কাজ ছাড়াও জিরিয়ান ব্যবহারকারীর সাথে ইংরেজি ভাষায় গল্প করতে পারে। জিরিয়ান আপটি সাইজে ছোট ও ব্যবহার করা বেশ সহজ। অ্যাপটি ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা তাদের সময় বাঁচাতে পারেন।
জিরিয়ান আপটি ডেভেলপ করেছেন মুবিন উল আলম। মুবিন বর্তমানে আহসানউল্লাহ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগে পড়ছেন। অ্যাপটি বানাতে তার প্রায় এক বছর সময় লেগেছে। মুবিন বলেন, “আমি গান শুনতে খুব পছন্দ করি। কিন্তু গান শোনার সময় বারবার মোবাইল আনলক করে মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপ থেকে গান সিলেক্ট করতে হয়, যা খুব বিরক্তিকর। তাই আমার মাথায় আইডিয়া আসল, যদি এমন একটা অ্যাপ বানাই যেটাকে শুধু গানের নাম বললেই ওই গান প্লে করবে এবং মিউজিক প্লেয়ারের অন্য ফিচার গুলোও কথা বলে করানো যাবে; তাহলে কেমন হয়! এভাবেই জিরিয়ানের চিন্তা প্রথম আসে।”
সিএসইতে লেখাপড়া করায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই মুবিন প্রোগ্রামিং করেন। বিভিন্ন অ্যাপ ও ছোট ছোট সফটওয়্যার ডেভেলপ করার মাধ্যমে তার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে হাতেখড়ি হয়। অ্যাপ তৈরির সময়ে কী কী বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তরে মুবিন বলেন, “অ্যাপ তৈরিতে প্রচুর বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। এতো বড় একটি অ্যাপ একা বানানো অনেক সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অ্যাপের কোড করতে যেয়ে অনেক সমস্যায় পড়েছিলাম। এরপর প্লে-স্টোরে ডেভেলপার অ্যাকাউন্ট খুলতে যেয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম মাস্টারকার্ড না থাকার কারনে। অ্যাপের ব্যাপারে মানুষকে জানানোও কষ্টকর ছিল।”
মুক্তির পর থেকেই বেশ ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে জিরিয়ান অ্যাপটি। এখন পর্যন্ত গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপটি ডাউনলোড করা হয়েছে হাজারবার। ৫২১ জনের রেটিং নিয়ে অ্যাপটির বর্তমান রেটিং ৪.৮। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট ডাউনলোডঅ্যাস্ট্রো “অ্যাপ অফ দ্যা ডে” বলে নির্বাচিত করেছে জিরিয়ানকে।
জিরিয়ান অ্যাপটি বর্তমানে বিনামূল্যে গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। মুবিন জানান, ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন ফিচার যোগ করা হবে জিরিয়ানে।
সম্পাদনা: মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম
[[আপনি কি জিরিয়ান অ্যাপটি ব্যবহার করেছেন? অ্যাপ সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]
Leave a Reply