ছোট্ট বাচ্চারা একটু-আধটু দুষ্টামো করবেই। আর তাদের এই দুষ্টামোর জন্যে তাদেরকে খুব সহজেই শায়েস্তা করতে পারবেন এমনটা ভাবলেও ভুল করবেন! রাগের বশে গায়ে হাত তুললে করবেন আরও বড় ভুল। বাচ্চাদের গায়ে হাত না তুলেই তাদেরকে শায়েস্তা করার উপায় জানতে পড়ুন লেখাটি।

বেশিরভাগ বাচ্চাই প্রচণ্ড পরিমাণে জেদি হয়। পান থেকে চুন খসলেই দেখবেন কান্নাকাটি করে চোখ-মুখ লাল করে বসে আছে। আবার অনেক সময় জেদের কারণে করতে চাইবে না অনেক সাধারণ কাজও। বাচ্চারা এতকিছু বোঝে না। তাই তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন কাজ করিয়ে নিতে অনুসরণ করতে পারেন অভিনব কিছু পন্থা!
বাচ্চা বাবা-মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হতে না চাইলে
অনেক সময় রাস্তা পার হবার সময় বাচ্চারা রাস্তার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় অথবা মা-বাবার হাত না ধরে নিজে থেকেই রাস্তা পার হতে চায়; যা তাদের জন্যে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ! এসকল ক্ষেত্রে বাচ্চাদেরকে বকা দিয়ে বা হাত ধরতে বলে কাজ না হলে তাকে একটু ভিন্নভাবে ব্যাপারটা বলুন। এমনভাবে পুরো জিনিসটিকে উপস্থাপন করুন যাতে তার মনে হয় যে রাস্তা পার হওয়া নিয়ে সাহায্য আসলে তার না, আপনার দরকার। বাচ্চারা এসব ক্ষেত্রে তাদের বাবা-মাকে সাহায্য করতে বেশ ভালোবাসে!
অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের জন্যে শিশুরা কখনোই শাস্তি পেতে চায় না
অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ব্যবহারে শিশুদেরকে মানসিক বা শারীরিক শাস্তি দেওয়াটা একেবারেই ঠিক নয়। এর চেয়ে তাদেরকে সুন্দর করে তাদের ভুলটা বুঝিয়ে বলুন। দরকার পড়লে একটা ব্যবসায়িক লেনদেন ব্যবস্থা চালু করুন। যেমন ধরুন, তার অপরাধের শাস্তি হিসেবে এক সপ্তাহ রান্নাঘরে থালাবাটি পরিষ্কার বা রাতে টিভি দেখার সময় থেকে আধা ঘণ্টা বাদ দেওয়া। মোট কথা তাকে অপশন দিন। আরও পড়ুন…সন্তানের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ ঠিক করতে ব্যবহার করুন এই তিন কৌশল।
শিশু খাবার টেবিলে স্যুপ বা সবজি খেতে চায় না, কিন্তু চকলেট চায়! কী করবেন?
বাচ্চারা চকোলেট পছন্দ করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে তাদেরকে অতিরিক্ত পরিমাণে চকোলেট খাওয়ালে সেটা যেমন তাদের দাঁতের ক্ষতি করবে তেমনি ক্ষুধাও নষ্ট করে দেবে। কিন্তু বাচ্চারা মাঝেমধ্যে পুষ্টিকর খাবার রেখে চকলেটের বায়না ধরে! সেক্ষেত্রে কখনোই তাদেরকে বলবেন না যে “না খেলে চকোলেট দেওয়া হবে না।” বরং এই কথাটিকেই একটু ঘুরিয়ে বলুন। তাদেরকে বলুন যে স্যুপের পুরো বাটি শেষ করতে পারলে পুরষ্কার হিসেবে তার পছন্দের চকলেটটা দেবেন। বাচ্চারা পুরষ্কার পেতে খুব পছন্দ করে। আর সেটা যদি চকোলেট হয় তাহলেতো কথাই নেই!
বাচ্চা সকালের নাস্তা খেতে চায় না
চাকরিজীবী বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটা হয় যে বাচ্চা সকালবেলা নাস্তা খাচ্ছে না বা পুরোটা নষ্ট করে বসে থাকছে! বাবা-মা অফিসের জন্যে ব্যস্ততার মধ্যে অনেক সময় হয়তো খেয়ালও করে উঠতে পারেন না।
এই সমস্যাটার সমাধান খুবই সহজ। আর সেটা হলো, বাচ্চাকে সকালবেলা একটু সময় দেওয়া। নাস্তার টেবিলে একসাথে বসুন। বাচ্চার সাথে গল্প করুন আর গল্প করতে করতেই খাইয়ে দিন। অফিসে যাবার আগে আপনারতো এমনিতেও ব্রেকফাস্ট করতে হতো, তাই না?
বাইরে বের হবার সময় জামা-কাপড় পরতে না চাওয়া
বাচ্চাদের বেশিরভাগ কাজের পেছনেই কোন কারণ থাকে না। কিন্তু কারণ থাকুক বা না থাকুক তারা ঠিকই সেগুলো নিয়ে গো ধরে বসে থাকে! এমন একটি বাইরে যাবার সময় কাপড় পরতে না চাওয়া। বাবা-মা এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় সুন্দর করে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, আবার অনেক সময় ঝাড়ি দিয়ে বাচ্চাকে কান্নাকাটি করিয়ে অবস্থা আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়!
বাচ্চারা কোনকিছু করতে না চাইলে তাদেরকে দিয়ে খেলার চলে সেটি করিয়ে নেওয়া সম্ভব। কাপড় পরতে না চাইলে সেটিও খেলার ছলে করানোর চেষ্টা করুন। চোখে বাধার মতন এক টুকরো কাপড় এনে বলুন, “দেখি তো, তুমি চোখ বন্ধ করে কাপড় পরতে পারো নাকি!” দেখবেন বাচ্চা বেশ আগ্রহের সাথে খেলায় মেতে উঠছে। এখানে তার উদ্দেশ্য হবে চোখে কাপর বাধা অবস্থায় নিজে থেকে কাপড় পরতে পারা আর আপনার উদ্দেশ্য হবে তাকে জলদি রেডি করিয়ে ঘরের বাইরে যাবার ব্যবস্থা করা।
তবে এই একই বুদ্ধি হয়তো প্রতিদিন প্রতিদিন কাজে আসবে না। সেক্ষেত্রে কয়েকদিন পর পর নতুন ধরনের খেলা আপনাকে নিজেকেই আবিষ্কার করে নিতে হবে।
[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]
Leave a Reply