যশোরের পাখির বাসা রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। পাখির বাসা বুনে জীবিকা নির্বাহ করছেন যশোরের দুই শতাধিক নর-নারী। বাঁশ, বেত, নারকেলের ছোবড়া, পাট, বাঁশপাতা, বিচালি আর সুতা দিয়ে বোনা হচ্ছে এই পাখির বাসা। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। বাঁশ আর বেত দিয়ে পাখির ছোট্ট বাসা তৈরি করে ঋষি সম্প্রদায়ের পুরুষেরা।

আর নারকেলের ছোবড়া, পাট, বাঁশপাতা, সুতার বাসা তৈরি হয় নারীর হাতে। খাঁচায় পোষা পাখির জন্যেই তৈরি করা হয় এই বাসা। যশোর সদরের কচুয়া, বাহাদুরপুর, চাউলিয়া ও শহরের বেজপাড়া বুনোপাড়ায় তৈরি হচ্ছে পাখির বাসা। এসব স্থানে এ কাজে জড়িতদের সাথে কথা বলে নানা তথ্য মিলেছে।
ঢাকার একজন প্রতিষ্ঠিত রপ্তানিকারক খাইরুল ইসলাম যশোর থেকে তাদের তৈরি পাখির বাসা বিদেশে রপ্তানিতে সফল হয়েছেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত তিনি। যশোরে তার এই ব্যবসা দেখাশোনা করেন গৌরাঙ্গ সাহা। সদর উপজেলার রামনগর নামেজ সরদার স্কুলের পাশেই রয়েছে তাদের এই প্রতিষ্ঠান।
খাইরুল ইসলাম পাখির বাসা তৈরিতে তাদের অগ্রিম সহায়তা প্রদান করেন। সরবরাহ করা পাট ও সুতা দিয়ে ছোট, বড় ও মাঝারি এই তিন আকারের এক একটি বাসা তৈরির মজুরি ৭০ পয়সা থেকে ১ টাকা ২০ পয়সা। আর নিজেদের কেনা বাঁশ বা বেত দিয়ে তৈরি বাসার মূল্য দেয়া হয় ১০ থেকে ১২ টাকা।
নারীরা নিজের সাংসারিক কাজের ফাঁকে বাসা তৈরি করে থাকে। নির্দিষ্ট ডায়াসের ওপর নারকেলের ছোবড়া দিয়ে বানানো দড়ি জড়িয়ে পাখির বাসার আকৃতি করে তার ওপর সুঁই-সুতার বুননির সাহায্যে এই বাসা তৈরি হয়। একজন নারী দিনে ৭৫ থেকে ১৫০টি বাসা তৈরি করে থাকেন। মজুরিও চাওয়ার আগে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে আসে। একজন নারী প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ টাকা আয় করে থাকেন এই পাখির বাসা তৈরি করে।
বাসা তৈরির কাজে জড়িত যশোর শহরের বেজপাড়া বুনোপাড়া এলাকার ইন্দ্রা সাহা বলেন, তারা ২০ পরিবারের ২৯ নারী এই কাজের সাথে জড়িত। প্রায় ২০ বছর ধরে পাখির বাসা তৈরির কাজ করছি। পরিবারের জন্যে এটা আমার বাড়তি আয়।
তিনি জানান, এই কাজে আলাদা কোনো সময়ের প্রয়োজন হয় না। সন্ধ্যায় টিভি দেখার সময় বা অন্য যে কোনো কাজের ফাঁকে এই কাজ করে থাকি। তার জন্যে সাংসারিক কাজের কোনো ঝামেলা বা সমস্যা হয় না।
পাখির বাসা তৈরিকারক চায়না সাহা বলেন, পাখির বাসা তৈরির জন্যে বাড়তি সময় দিতে হয় না, তবে বাড়তি উপার্জন হয়। এ ছাড়াও কথা হয় ঝর্ণা সাহা, অনামিকা, মিনা খাঁ, প্রভাতীসহ অনেকের সাথে। তারা জানান ৩৫/৪০ বছর আগে থেকে আমরা এই কাজে জড়িত।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার গৌরাঙ্গ সাহা বলেন, প্রতিমাসে অন্তত এক ট্রাক বাসা যশোর থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন ইউরোপের অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মান, নিউজিল্যান্ডসহ থাইল্যান্ডে যাচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি পাখির বাসা। এই কাজে যশোরের ২ শতাধিক নর-নারী সরাসরি জড়িত বলে তিনি জানান।
রিপোর্ট: মহসিন মিলন, যশোর থেকে