জার্মানিতে অকালে প্রাণ হারান এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তাঁর পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়, আর সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষান্ত। ফলে একদল শিক্ষার্থী উদ্যোগ নেন মরদেহ দেশে পাঠানোর। সেই উদ্যোগের রাজনীতিকরণ করা হলো কৌশলে।

শনিবার ফেসবুকে একটি পোস্ট চোখে পড়ে। জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সুজন চন্দ্র সরকার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২৬ বছর শনিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। জার্মান চিকিৎসকরা চিকিৎসায় কমতি করেননি। কিন্তু বাঁচানো যায়নি বাংলাদেশের চাঁদপুরের মেধাবী শিক্ষার্থীকে।
সুজনের মৃত্যুর পরই তাঁর মরদেহ দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেন প্রবাসী শিক্ষার্থীরা। তাঁর অবস্থা যে দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে তা আগেই জানতেন তারা। আরো জানতেন, মরদেহ ফেরত নেয়ার মতো আর্থিক সহায়তা সুজনের পরিবারের নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা উদ্যোগী হয়ে অর্থ সংগ্রহে নামেন দ্রুত।
জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একটি বড় অনলাইন নেটওয়ার্ক রয়েছে। জার্মান প্রবাসে নামক অরাজনৈতিক সেই নেটওয়ার্কের উদ্যোগে টাকা তোলার আহ্বানে অনেকে সাড়া দেন। এরইমধ্যে অবশ্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। কেননা, সরকার ঘোষণা দিয়েছিল আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল প্রবাসীদের মরদেহ দেশে ফেরত নিয়ে দাফনের সব দায়িত্ব বহন করবে সরকার। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি ফেসবুকে সেই প্রতিশ্রুতির কথা পুর্নব্যক্ত করেন।
তবে মরদেহ দেশে ফোরানোর উদ্যোগে সরকারের প্রতিশ্রুতির কোন বাস্তব উদ্যোগ তাৎক্ষণিকভাবে দেখা যায়নি। বরং জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাস আর্থিকভাবে সহায়তা সম্ভব নয় জানিয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রবাসী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ সম্ভব হয় সোমবারের মধ্যেই। সম্ভব হয় মরদেহ দেশে পাঠানোর সব ব্যবস্থা দ্রুত করা।
সুজনের মরদেহ তাঁর প্রিয়জনের কাছে পাঠানোর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জার্মান প্রবাসী শিক্ষার্থী জাহিদ কবীর হিমন। জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিনের এই সম্পাদক জার্মানির বাঙালি কমিউনিটিতে এক পরিচিত মুখ। সুজনের মরদেহ দেশে পাঠানোর অর্থ সংগ্রহ নিয়ে একটি অনলাইন পত্রিকা শিরোনাম করেছে, “জার্মান ছাত্রলীগ নেতা হিমনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সুজনের মরদেহ যাচ্ছে তার মায়ের কোলে।”
প্রবাসী শিক্ষার্থীদের কষ্টার্জিত অর্থে বাস্তবায়িত চমৎকার একটি উদ্যোগে রাজনীতির রঙ লাগাতে পত্রিকাটি লিখেছে, “জার্মান ছাত্রলীগ এর সদস্য জাহিদ কবির হিমনের ডাকে মৃত সুজনের পাশে হাজারো সুজন দাড়িয়েছে তার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরন করতে। জার্মান ছাত্রলীগ এর সদস্য জাহিদ কবির হিমনের সর্বাত্মক চেষ্টায় অনলাইন প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে সুজনের মরদেহ পাঠানোর সাড়ে ছয় হাজার ইউরো ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে।”
ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের জার্মানি শাখার অনেক সমর্থক খবরটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে পুরো কৃতিত্ব তুলে দিচ্ছেন “ছাত্রলীগ নেতা” হিমনের কাঁধে। অথচ হিমন কোন রাজনৈতিক পরিচয়ে সুজনের মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য টাকা চাননি। এই খবর প্রকাশে তাই যারপরনাই বিব্রত হিমন, বিব্রত সেসব সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা তাদের সতীর্থর পাশে দাঁড়িয়েছেন মানবতার খাতিরে, রাজনৈতিক ব্যানারে নয়।
ছাত্রলীগ বা বর্তমান সরকার অবশ্যই সুজনকে দেশে ফেরানোর কৃতিত্ব নিতে পারতো যদি তারা প্রকৃত অর্থে কিছু করতো। কিন্তু কিছুই না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সামাজিক উদ্যোগকে রাজনীতিকরণ নিন্দনীয়। এমনটা কোনভাবেই কাম্য নয়। বরং সকলের উচিত রাজনীতি থেকে বাইরে গিয়ে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো।
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে।
Leave a Reply