ফেসবুকের ডেটা সায়েন্স বিভাগের একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করেন ভালোবাসা নিয়ে। বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে প্রেমিক-যুগলদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন তারা। আর এই গবেষণায় ফলে ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা সংক্ষেপে এআই) এখন নিজে থেকেই বুঝতে পারে কখন একজন ব্যবহারকারী প্রেমে পড়তে চলেছে!

কিন্তু কীভাবে সম্ভব হৃদয়ের অতি জটিল এই ব্যাপারটা আগে থেকেই বুঝে ফেলা? ব্রাইটসাইড এবং ফেসবুক ডেটা সায়েন্সের বিভিন্ন প্রতিবেদন অবলম্বনে নিচে দেওয়া হলো আটটি উপায় যা ফেসবুককে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করতে সহায়তা করে।
১) ফেসবুক ভালোবাসা নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী তৈরিতে ব্যবহার করে অন্যান্য যুগলদের তথ্য!
ফেসবুকে সবাই নিজেদের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস উন্মুক্ত করে রাখে না। অনেকেই আছেন যারা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনটাকে বাকিদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু তাই বলে ফেসবুক কিন্তু থেমে থাকে না! ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বদলানো ব্যবহারকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ফেসবুক। আর সেইসব ডেটা তাদেরকে সাহায্য করে অন্য কোন কোন ব্যবহারকারী প্রেমে পড়েছে বা পড়তে চলেছে তা খুঁজে বের করতে।
ফেসবুক যদি বুঝতে পারে যে আপনি কারো প্রেমে পড়েছেন তাহলে,
- আপনি সেই মানুষটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আরো বেশি বেশি করে আপনার নিউজফিডে দেখবেন।
- সেই ব্যক্তিটি আপনার চ্যাটলিস্টের একেবারে উপরে থাকবে।
- তার জন্মদিনে পার্টি করার জন্যে আপনাকে ইভেন্ট তৈরি করতে বলবে ফেসবুক।
- ফেসবুক মাঝেমধ্যে আপনাদের দুইজনের বিভিন্ন সময়কার ঘটনা টাইমলাইনে শেয়ার করার জন্যে আপনার সামনে এনে হাজির করবে।
২) মানুষ প্রেমে পড়লে কী লেখে তা দেখে ফেসবুক।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ফেসবুকের রিলেশনশিপ স্ট্যটাস “ইন আ রিলেশনশিপ” দেবার প্রায় ১০০ দিন আগে থেকেই ব্যবহারকারীরা তাদের পোস্ট, কমেন্ট বা মেসেজে “লাভ”, “সুইট” এবং “হ্যাপি” শব্দগুলি বেশি বেশি ব্যবহার করে। প্রতি বারোটি পোস্টের মধ্যে দুইটি পোস্টেই এমনটা হয়। এছাড়াও প্রেমে পড়লে মানুষ নেতিবাচক সংবাদের চেয়ে ইতিবাচক সংবাদগুলি বেশি বেশি শেয়ার করে।
৩) ফেসবুক আপনি ভবিষ্যতে যার প্রেমে পড়বেন তার বয়স আন্দাজ করতে সক্ষম!
ফেসবুক ডেটা সায়েন্সের বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার একই বয়সের প্রেমিক/প্রেমিকার প্রতি আকৃষ্ট হবার সম্ভাবনা কমে যায়। বিশ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্য থাকে এক বা দুই বছর। কিন্তু ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষদের ক্ষেত্রে বয়সের এই পার্থক্য গিয়ে দাঁড়ায় ৫-৬ বছরে! তবে এখানে ব্যতিক্রমও হয়। স্ক্যান্ডিনিভিয়ানরা সাধারণত সঙ্গী হিসাবে একই বয়সের পুরুষদেরকে বেছে নেয় নারীরা। অন্য দিকে মিশরের পুরুষরা বেছে নেয় তাদের চেয়ে কমপক্ষে আট থেকে দশ বছরের ছোটো নারীদেরকে।
৪) ফেসবুক জানে আপনি কোন মাসে নতুন মানুষদের সাথে বেশি পরিচিত হবেন।
ফেসবুকের গবেষণা অনুযায়ী মানুষ আগস্ট মাসে নতুন মানুষদের সাথে বেশি পরিচিত হয় যাদের বেশিরভাগই অন্য দেশের নাগরিক। এর কারণ বেশিরভাগ মানুষই আগস্টে ছুটিতে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হয়। স্বভাবতই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয় এবং তা ফেসবুক পর্যন্তও গড়ায়।
৫) “শুধু কি মোহ, নাকি ভালোবাসা?”-এই প্রশ্নের উত্তরও রয়েছে ফেসবুকে কাছে!
ধরুন আপনার বয়স ২৩ বছর। আপনি আর আপনার প্রেমিকা দুইজনে মিলে ঠিক করলেন যে ফেসবুকের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বদলে “ইন আ রিলেশনশিপ” দিতে চান। ফেসবুকের গবেষণা অনুযায়ী, একটি যুগল তিন মাসের বেশি সময় ধরে তাদের ফেসবুকে এই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস রাখলে তাদের চার বছর বা তার অধিক সময় ধরে একসাথে থাকার সম্ভাবনা বহু অংশে বেড়ে যায়। একটি প্রেমিক যুগল যতো বেশি সময় ধরে একসাথে থাকে, তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ির সম্ভাবনা ঠিক ততোটাই কমে যায়।
৬) প্রেমিক প্রেমিকারা কখন বেশি ঝগড়া করে তা জানে ফেসবুক।
বেশিরভাগ সম্পর্কের ইতি টানা হয় ফেব্রুয়ারীতে আর মে-জুনের মাঝামাঝি সময়ে।
৭) ব্রেকআপ-পূর্ববর্তী ও ব্রেকআপ-পরবর্তী যোগাযোগের পরিমাণ
সম্পর্ক শেষ হবার এক সপ্তাহ আগে থেকেই ব্যবহারকারীরা নিকটাত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেয়। মেসেজ থেকে শুরু করে ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যগুলি এই যোগাযোগের অংশ। আর ব্রেকআপের দিন এই সংখ্যা আগের চেয়ে ২২৫% পর্যন্ত বেড়ে যায়! বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনরা ব্রেকআপ-পরবর্তী সময়টাতে পাশে থাকে বলেই এমনটা হয়।
৮) ভালোবাসা মানুষের আয়ূ বাড়ায় বলে মনে করে ফেসবুক!
যারা সবসময় প্রিয়জনদের সাথে সংযুক্ত থাকে তারা কেবলমাত্র সামনা-সামনি যোগাযোগের উপর নির্ভরশীলদের চেয়ে বেশিদিন বাঁচে। শুধুমাত্র যোগাযোগের ধরণটাই এর কারণ নয়। ফেসবুক ব্যবহার করে সবসময় সবার সাথে সংযুক্ত থাকায় একজন ব্যবহারকারী যেকোনো সমস্যায় পড়লে অন্যদের সহায়তা, আদর-যত্ন পায়। ভালো কাজে উৎসাহ পায়।
[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]
Leave a Reply