যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার উৎপাদিত বইকচু বা লতিকচু মালয়েশিয়াসহ সাতটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বইকচু বা লতিকচু রপ্তানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।

১৯৯৭ সালে বাঘারপাড়া উপজেলার সাহসী ছেলে মেহেদী মাসুদ খুলনা আজম খান কমার্স কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তিনি একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে সবজির ব্যবসা শুরু করেন।
মাত্র দেড় লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে তার ব্যবসা শুরু। ২০১৩ সালে তিনি বাঘারপাড়াসহ যশোরের বিভিন্ন ক্ষেত-খামার থেকে সবজি কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। এক পর্যায়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন সবজি বিদেশে রপ্তানির। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তিনি রাজধানীর বড় মগবাজারের ঠিকানায় ‘ক্যাপিটাল ফুডস ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স করেন।
তিনি জানান, সবজি বিক্রেতা হিসেবে এ প্রক্রিয়ায় আসা সহজ ছিল না তার। লাইসেন্স করতেও তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। প্রকৃত খরচের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা ব্যয় হয়েছে এ খাতে। লাইসেন্স হাতে পাওয়ার পর প্রথমে স্বল্প পরিসরে যশোরের বাঘারপাড়া এলাকার কাঁকরোল কিনে বাহরাইনে রপ্তানি করেন। দুই-এক চালানে ভালো লাভও হয়। কিন্তু বাহরাইনের কয়েক ব্যবসায়ী তার বেশ কিছু টাকা মেরে দেন। এতেও তিনি দমে যাননি। তিনি এর পরে দেশে চাষাবাদের পর কচুর মোথা বা লতি কচুর গোড়া এলাকার ক্ষেত-খামার থেকে নামমাত্র দামে কিনে মালয়েশিয়ায় পাঠানো শুরু করেন।
এর পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ৫০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এসব কর্মী প্রতিদিন সকাল থেকে এলাকার বিভিন্ন ক্ষেতে যান। এর পর কৃষকের কাছ থেকে কম দামে কচুর মোথা বা গোড়া কিনে নেন। তার পর সেগুলো উঠিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ৩০ কেজি করে নেটের ব্যাগে বোঝাই করেন। তার পর সেখান থেকে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠায়। এর পর জাহাজে করে তা পৌঁছে যায় মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের সাতটি দেশে।
মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমি লেখাপড়া শেষ করে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি। কিন্তু আমি ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারিনি। শেষে চাকরি ছেড়ে সবজি ব্যবসায়ে লেগে পড়ি। ভাই শামিম সিকদারকে দিয়ে এলাকা থেকে সবজি সংগ্রহ করি। আর আমি চট্টগ্রাম ও ঢাকায় থেকে সবজি রপ্তানির জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। মাঝে মধ্যে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, বাহরাইন, সিঙ্গাপুরসহ সাতটি দেশে যেতে হয় আমদানিকারকদের সাথে কথা বলার জন্য। বর্তমানে আমি মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের সাতটি দেশে বিভিন্ন ধরনের সবজি রপ্তানি করছি। এর মধ্যে কচুর মুখী, কচুর মোথা, কাঁকরোল, করলা, গোলআলু, মানকচু, শিম উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে কচুর মোথা বেশি পাঠাচ্ছি মালয়েশিয়ায়। কচুর মোথার দাম দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিবিঘা কচুর মোথা কেনা হচ্ছে ২০ হাজার টাকায়। এ জমি থেকে ৩০ বস্তার ব্যাগের ১২০ থেকে ১৩০ ব্যাগ কচু পাওয়া যায়। ৩০ কেজি ওজনের একটি ব্যাগ মালয়েশিয়া পৌঁছাতে ৫০০ টাকা খরচ হয়। ওখানে এক ব্যাগ কচুর মোথা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়।
যশোরের কৃষি কর্মকর্তা ইমদাদ হোসেন বলেন, যশোরের এমন কিছু কিছু সবজির উচ্ছিষ্ট আছে যা কিনা অন্য দেশে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে পারলে এসব পরিত্যক্ত সবজির অংশগুলো বিদেশে রপ্তানি করে আরও বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হতো।
লেখক: মহসিন মিলন
[ভেরিফাইড প্রেসের কন্টেন্ট পার্টনার সাপ্তাহিক বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ধারার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন।]