ফিলিস্তিনিদের ইতিহাস নিয়ে চার পর্বের বিশেষ ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে থাকছে ইব্রাহিমী তিন ধর্মে ইহুদি জাতির উত্থান।

সভ্যতার শুরুতে জেরুজালেম ছিলো এক মরুশহর। এই মরুশহরেই স্বদেশ ছেড়ে এসেছিলেন হযরত ইব্রাহীম আ:। ইসলাম ধর্ম মতে হযরত ইব্রাহীম অা: হলেন মুসলিমদের জাতির পিতা। খ্রিস্টানদের মতে, হযরত ইব্রাহীম আ: এর বংশধর ঈসা আ: তথা যিশু। আর ইহুদিদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আব্রাহাম তথা হযরত ইব্রাহীম আ: এর বংশধর ছিলেন মোশী, মোজেস তথা হযরত মূসা আ:।
ইহুদিরা বিশ্বাস করে থাকে, ইব্রাহীম আ: ঈশ্বরের নির্দেশে Chanaan, JUDEA, জুডা, প্যালেস্টাইন বা ইসরাইলে এসেছিলেন।ঈশ্বর তাঁকে বলেছিলেন- স্বদেশ, জ্ঞাতিকুটুম্ব ও গৃহত্যাগ করে সেই দেশের দিকে ধাবিত হও যা আমি তোমাকে দান করবো। আমি তোমার থেকে একটি জাতি তৈরি করবো, আশীর্বাদ করবো, তোমার নাম মহৎ করবো, তুমি নিজেই হবে আশীর্বাদস্বরূপ। (Gene: 12:1-2) ঈশ্বরের সেই নির্দেশ মোতাবেক ইরাকের হারান নামক স্থান থেকে তাবু গুটিয়ে নিয়ে স্ত্রী সারা, ভ্রাতুষ্পুত্র লত, সকল পশুসম্পদ নিয়ে ৭৫ বছর বয়সে ক্যানানে চলে যান যার আজকের নাম ইসরাইল অথবা প্যালেস্টাইন।
এরপর থেকে তাঁর বংশধররা বসবাস করে আসছে প্যালেস্টাইনে। অত্যাচারিত হয়েছে ব্যবিলনীয়, অ্যাসিরীয় ও গ্রীকদের দ্বারা। পরবর্তী গোষ্ঠীগত জীবনত্যাগ করে হতে হয়েছে যাযাবর।
ইব্রাহীম আ: এর প্রথম স্ত্রী সারার এক মিশরীয় দাসী ছিলো (Huger) আগার। প্রথম স্ত্রীর অনুরোধে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেন আগারকে। সারার নিঃসন্তান থাকার কারণেও তিনি আগারকে বিয়ে করেছিলেন। আগারের ঘরে ইব্রাহীমের ৮৬ বছর বয়সে জন্মগ্রহণ করেন ইসমাইল আ:। ইব্রাহীম আ: এর প্রথম সন্তান ইসমাইল আ: থেকে যে মানবগোষ্ঠীর সূত্রপাত তারা হলেন আরব। ইসলাম ধর্ম মতে মহানবী হযরত মুহম্মদ স: ও তার পূর্বপুরুষদের আদি পিতা হলেন হযরত ইসমাইল আ: ও হযরত ইব্রাহীম আ:।
ইব্রাহীম আ: এর ১০০ বছর বয়সে প্রথম স্ত্রী সারার ঘরে হযরত ইসহাক আ: জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুত্র হযরত ইয়াকুব আ: তথা য্যাকোব। ইয়াকূব আ: এর চার জন স্ত্রী, বারো জন পুত্র ও এক জন কন্যাসন্তান ছিলেন । তন্মধ্যে তিনি হযরত ইউসূফ আ:কেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তাঁর অপর ভাইরা তাঁকে খুব হিংসা করত। তবে বেঞ্জামিন তাঁকে খুব ভালোবাসত। তবে ভাইদের সাথে হযরত ইউসূফ আ: এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। একদিন মেষ চরাতে যাওয়ার কথা বলে হযরত ইউনসূফ আ:কে গর্তে ফেলে দেয় তাঁর সৎ দশ ভাই। পরে তাঁকে পথিক বণিকদল খুঁজে পায় এবং মিশরের ফারাওয়ের তত্ত্বাবধায়ক তাঁকে কিনে নেন।
ইসলাম ধর্মে হযরত ইয়াকূব আ:কে নবী হিসেবে বলা হলেও ইহুদি ধর্মে বলা হয়েছে তিনি পিতা হযরত ইসহাক আ: এর উত্তরাধিকার হাসিলের চক্রান্ত করেছিলেন। তবে তাঁকে এক আগন্তুকের সাথে কুস্তি প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। যে কারণে হযরত ইয়াকূব আ:কে ইহুদিরা ‘ইসরায়েল’ বলে সম্বোধন করে। যার অর্থ যিনি ঈশ্বরের সাথে যুদ্ধ করেন। ইহুদি ধর্ম মতে ইহুদি জাতির সূত্রপাত এখান থেকেই। ইয়াকূব আ: তাঁর বারো পুত্র সহ পরবর্তীতে মিশরে অভিবাসী হয়েছিলেন। ইয়াকূব আ: এর বারো পুত্রের মিশরে অভিবাসী জীবন থেকে বারোটি গোত্রের সূত্রপাত।
সম্পাদনা: মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম
[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]
Leave a Reply