মাসিকের সময় রক্তের রঙের পরিবর্তন খেয়াল করুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন আপনার শারীরিক সুবিধা-অসুবিধার কথা।

আমাদের উপমহাদেশে মাসিক বা রজ:স্রাব সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে একধরনের ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়। প্রকাশ্যে এর আলোচনা কিংবা এই সম্পর্কিত কোন কিছুকেই ভালো চোখে দেখেনা আমাদের সমাজ। এই অপ্রকাশযোগ্যতার কারণে মাসিক বা রজ:স্রাবের মত প্রাকৃতিক একটা বিষয়কে নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ও অনেক অজানা রয়েই যাচ্ছে।
আধুনিক সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে থাকা বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে তথাকথিত ট্যাবুর পর্দা ছিড়ে। নারীদের মাসিক বা রজ:স্রাবের মত প্রাকৃতিক বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন হচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়েই। যে নারীর গর্ভে আসে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেই নারীর প্রাকৃতিক বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা শিক্ষিত ও সচেতন সমাজের মানুষগুলোর কর্তব্য। কিন্তু অতি গোপনীয় এই বিষয়টি দীর্ঘদিন পর্দার আড়ালে থাকার কারণে এর অনেক বিষয়ই আমাদের অজানা। মাঝে মাঝে নারীদের মাসিকের বা রজ:স্রাবের রক্তের রঙের ভিন্নতা আসে। আর সেই ভিন্নতা কেউ কেউ স্বাভাবিক ভাবে নেয় আবার কেউ লজ্জায় কারো কাছে বলতেও পারেনা। আমাদের আজকের এই ব্লগ পোস্টে মাসিকের বা রজ:স্রাবের রক্তের রঙের ৭টি পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হবে যা পড়লে আপনি নিজেই নিজের শারীরিক অবস্থা বুঝতে পারবেন-
মাসিকের রক্ত যখন গোলাপী বর্ণের হয়:
মাসিকের রক্তের রঙ গোলাপী বর্ণের হলে বুঝতে হবে দেহে অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে গিয়েছে। তবে নারী ক্রীড়াবিদদের মাসিকের রক্ত গোলাপী বর্ণের হয় বলে একাধিক পরীক্ষায় উঠে এসেছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নারী দৌড়বিদদের এই সমস্যা দেখা দেয়।
বর্ণহীন রক্ত:
বর্ণহীন রক্ত বা পানিরমত কিংবা একদমই হালকা গোলাপী বর্ণের রক্ত বলে দিবে আপনার শরীরের পুষ্টিহীনতার কথা। কখনো কখনো ওভারিয়ান ক্যান্সার হলেও মাসিকের সময় এমন বর্ণের রক্ত আসতে পারে। তবে চিন্তার কারণ নেই। নারীদের গাইনোকোলজিকাল ক্যান্সারের মাত্র ২ শতাংশের জন্য দায়ী এটি। তবে এটা হলে দেরী না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
গাঢ় বাদামী বর্ণ:
মাসিক বা রজ:স্রাবের রক্তের রঙ যদি গাঢ় বাদামী হয় তবে বুঝতে হবে দীর্ঘদিনের পুরাতন রক্ত আপনার ইউটেরাসে জমা আছে। জমা থাকার কারণ বোঝা না গেলেও এই বিষয়ে বিচলিত হবার তেমন কিছু নেই।
ঘন জেলির মত এবং জমাট বাধা রক্ত:
ঘন জেলির মত এবং লালচে জমাট বাধা রক্তের কারণ হতে পারে দেহের হরমোনজনিত সমস্যা। দেহে প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমলে আর অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বাড়লে এই ধরণের মাসিক বা রজ:স্রাব হয়। জমাট বাধা রক্তগুলোর আকার ছোট হলে তেমন কোন সমস্যা নাও হতে পারে। তবে আকার বড় হলে বুঝতে হবে সমস্যা হরমোনে। সেক্ষেত্রে একেবারেই বিলম্ব না করে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ধূসর লালচে মিশ্র বর্ণ:
ধূসর বা ধূসর-লালচে মিশ্রণের মাসিক বা রজ:স্রাব দুটি জিনিস বোঝাতে পারে। যদি কেউ গর্ভবতী না হয় তাহলে এটি একটি STD/STI সংক্রমণের লক্ষণ, তবে যদি অন্তত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাসিক বা রজ:স্রাব না হয়, তবে এর অর্থ সম্ভবত এটি একটি প্রথম গর্ভপাত।
বেরির মত লালচে বর্ণ:
বেরি জামের মত ছোট একটি রসালো ফল। এর মত লালচে বর্ণের মাসিক বা রজ:স্রাব হলে বুঝে নিন সুস্থ আছেন। তবে সকলের ক্ষেত্রেই যে এই লালচে বর্ণ সুখকর হতে পারে তা নয়। সে কারণে ভিন্ন কিছু চোখে পড়লেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
কমলা বর্ণ:
কমলা বর্ণ বা লালচে ধূসর রঙ মানেই আপনি কোন ইনফেকশনে ভুগছেন। যদি এটি থেকে একটি খারাপ গন্ধ ছড়ায় এবং তীব্র ব্যথা নিয়ে আসে তবে এটি STD/STI সংক্রমণের লক্ষণ।
সম্পাদনা: মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম
[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]
Leave a Reply