বছরের পর বছর ধরে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে মায়ের কোলে এসে মৃত বাচ্চার জীবন ফিরে আসার একটি ভিডিও। ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে ভেরিফাইড প্রেস।

অনলাইনে প্রতিনিয়ত আমরা অনেক কিছু দেখি। প্রতিদিন দেখা এসব কন্টেন্টের মধ্যে কয়েকটি আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়। এসব ভিডিও সচরাচর ভাইরাল হয়। কেবলমাত্র একবার না, বারবার ভাইরাল হতে থাকে। সেরকম একটি ভিডিও এটি।
ফেসবুকে এগারো মাস আগে আপলোড হওয়া এই ভিডিওটির উপরে বাম পাশে আরবি হরফে একটি ওয়াটারমার্ক। ভিডিওটির শুরুতেই দেখা যায়, হাসপাতালের বিছানায় সদ্য জন্ম নেওয়া দুটি শিশু শুয়ে আছে। তাদের ভেতর একজন কাঁদছে। আরেকজন নিষ্প্রাণ। শকে স্তব্ধ মা এক পর্যায়ে নিষ্প্রাণ দেহটিকে নিজের কোলে তুলে আদর করতে শুরু করে। সাথে সাথে কেঁদে দেয় খানিক আগেও নিষ্প্রাণ থাকা শিশুটি। এ পর্যায়ে মূল ভিডিওটি শেষ হয়। শেষ হবার আগে আরবি হরফে কিছু বার্তা প্রদান করা হয়। ভাইরাল হওয়া বেশিরভাগ ভিডিওর শেষটাও একইরকমের।
নিঃসন্দেহে ভিডিওটি বেশ হৃদয়স্পর্শী। এতে কোনোপ্রকার সন্দেহ নেই। ভিডিওটি দেখলে যে কারোই মন কাঁদবে। খারাপ লাগাটা বেশ স্বাভাবিক; কারণ পুরো ভিডিওটা তৈরি করা হয়েছে দক্ষ সিনেমাটোগ্রাফার এবং অভিনেতাদের নিয়ে। থাইল্যান্ডে তৈরি হওয়া এরকম আরও অনেক বিজ্ঞাপন আছে, যেগুলি হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। থাইল্যান্ডে “বাবি মাইল্ড” নামক একটি শিশুসামগ্রীর বিজ্ঞাপন এটি। মূল ভিডিওর শেষে তাদের পণ্যের নাম উল্লেখ করা হয়। যেই অংশটিকে কেটে ভিডিওটিকে পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় আপলোড করে অন্যান্যরা।
এই ভিডিওটিকে এডিট করে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা ব্যবহার করে আলাদা করে আপলোড করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে প্রথম ভিডিওটার কথাই বলা যাক। যিনি আপলোড করেছেন তিনি কোথাও বলেন নি যে এটি একটি বিজ্ঞাপন, বাস্তব কোনো ঘটনা না। যারা মন্তব্য করেছেন তারাও এটাকে বাস্তব ধরে নিয়েছেন বলা চলে। অথচ সহজেই ভিডিওটি যে একটি বিজ্ঞাপন বা কোনো একটি মিডিয়া হাউজের কাজ সেটি বোঝা যায় পুরো বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত ভিন্ন ভিন্ন শটগুলিকে নিয়ে চিন্তা করলে। বাস্তব জীবনে এরকম একটি ঘটনায় এতো এতো শট কে নেবে?
তবে ভিডিওটি বিজ্ঞাপনের স্বার্থে বানানো হলেও, মায়ের আদর পেয়ে বাচ্চার নিষ্প্রাণ দেহে প্রাণ ফিরে আসার বাস্তব ঘটনা অস্ট্রেলিয়ায় ঘটেছে ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ। কেট অগ দুটি জমজ বাচ্চার জন্ম দেন, যাদের একজন জেমি, আরেকজন এমিলি। এমিলি জন্মের পর সুস্থ থাকলেও জেমি জন্মের পর নিঃশ্বাস নেয় না। ডাক্তাররা টানা ২০ মিনিট চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কেটকে জানানো হয় যে জেমি মৃত। হাসপাতালের নার্স জেমিকে কেটের কোলে দেয় যাতে সে তাকে শেষ বিদায় জানাতে পারে। জেমিকে বুকে জড়িয়ে আদর করে দুঃখ-ভারাক্রান্ত কেট। হঠাৎ করে সবাইকে অবাক করে দিয়ে জেমির হাত-পা নড়তে শুরু করে। ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। ঘটনাটি সম্পর্কে আরও জানতে ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকা এক্সপ্রেস-এর এই ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখতে পারেন।
থাইল্যান্ডের বিজ্ঞাপনের পেছনে মূল ধারণা হিসেবে হয়তো এরকম কোনো বাস্তব ঘটনাই ছিলো। তবে বিজ্ঞাপনটি বাস্তব নয়। আর সেটিকে এডিট করে মানুষকে সত্যটা না জানিয়ে বরং বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]
Leave a Reply