বাংলাদেশে গত একসপ্তাহে কয়েকজন মেয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। এটা কিভাবে হচ্ছে এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আমাদের বিশেষ ব্লগ।

‘‘আপু, আমি নতুন ছবি দিয়েছি প্রোফাইলে। প্লিজ লাইক দিন” – এক মেয়েবন্ধুর কাছ থেকে ফেসবুক ইনবক্সে এরকম এক ম্যাসেজ পান এক জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণী। সরল মনে ম্যাসেজটির সঙ্গে থাকা লিংকে ক্লিক করেন তিনি। এরপর ফেসবুকে আরেকবার লগ-ইন করার একটি পাতা আসে তার কাছে। সেখানে তিনি তার ফেসবুক আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে ছবিটি দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু ছবিটি পাননি।
এটা করার কিছুক্ষণ পরই প্রবাসী তরুণী টের পান তাঁর ফেসবুক একাউন্টে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতা টের পাওয়া যায় আরো কয়েকঘণ্টা পরে। তার কয়েকজন ফেসবুক বন্ধু ফোনে তাঁকে জানান, যে তাঁর একাউন্ট থেকে নানাজনের সাথে চ্যাট করে নানাবাহানায় টাকা চাওয়া হচ্ছে। বাংলায় লেখা সেসব চ্যাট দেখে বোঝা কঠিন যে এটা তিনি নন, বরং কোন হ্যাকার করছে। অবস্থা এমন যে সেই তরুণীর দুই ছেলেবন্ধু সেসব চ্যাট বিশ্বাস করে বাংলাদেশে চল্লিশ হাজার টাকাও পাঠিয়ে দিয়েছেন হ্যাকারের দেয়া উপায়ে!
জার্মানির এই বাংলাদেশি তরুণীর মতো আরো কয়েক তরুণীর ফেসবুক একাউন্ট একইভাবে হ্যাক হওয়ার কথা ‘‘ভেরিফাইড প্রেস” নিশ্চিত হয়েছে। কয়েকক্ষেত্রে এমন ম্যাসেজও আসে যে, আমি ছবি প্রতিযোগিতায় ছবি দিয়েছি… লাইক দেন। তারপর থেকে একটি লিংক (বামের ছবিটি দেখুন।)
যেভাবে হ্যাক হয় ফেসবুক একাউন্ট
“ভেরিফাইড প্রেসের” অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ম্যাসেজে থাকা লিংকটি আসলে একটি ফেক ফেসবুক মোবাইল পেজে নিয়ে যায় ক্লিক করা ব্যক্তিকে। এরপর তিনি যদি সেই লিংকে নতুন করে ফেসবুক আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেন তাহলে সেটা চলে যায় হ্যাকারের কাছে। হ্যাকার চক্র তখন সেই আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে দ্রুত ক্লিক করা ব্যক্তির ফেসবুক একাউন্টটিতে প্রবেশ করে এবং সেটির পাসওয়ার্ড ও ইমেল ঠিকানা বদলে ফেলে। একাউন্ট রিকভারির সকল পন্থাও দ্রুত বদলে ফেলে চতুর বাঙালি হ্যাকাররা। এরপর সেই ফেসবুক একাউন্টে থাকা বন্ধুদের থেকে বেছে বেছে কয়েকজনকে নিয়ে চ্যাট শুরু করে। এমনভাবে চ্যাট করে যাতে মনে হবে একাউন্টের আসল মালিকই চ্যাট করছে। তাদের কাছে বিভিন্নভাবে টাকা ধার চায়। তখন কেউ টাকা দিতে রাজি হলে তাঁকে বিক্যাশ বা অন্য মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হ্যাকাররা শুধু মেয়েদের একাউন্ট হ্যাক করছে।
একাউন্ট হ্যাক হওয়া রোধে যা করতে পারেন
ফেসবুকের ভাষায় এধরনের অনলাইন প্রতারণাকে বলে স্ক্যাম। এই স্ক্যামের কবলে না পড়তে চাইলে নীচের তিনটি কাজ করতে হবে:
১. কোন অবস্থাতেই কোন সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করে ফেসবুক আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেবেন না। মোবাইলে বা কম্পিউটার থেকে ব্রাউজার ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রবেশ করতে চাইলে ফেসবুক এড্রেসের শুরুতে ইংরেজিতে এইচটিটিপিএস (https://) আছে কিনা দেখে নেবেন। আর ফেসবুক অ্যাপ দিয়ে প্রবেশ করলে কোনো লিংকে ক্লিক করে দ্বিতীয়বার লগ-ইন করতে যাবেন না।
২. ফেসবুক একাউন্ট পুরোপুরি নিরাপদ রাখতে ‘‘টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন” অ্যাক্টিভ করুন। এই পন্থায় আপনার মোবাইল নম্বরটি ফেসবুকের কাছে থাকবে এবং আপনি নতুন কোন কম্পিউটার, মোবাইল বা লোকেশন থেকে ফেসবুকে প্রবেশ করতে চাইলে একটি এসএমএস কোড প্রয়োজন হবে। ফেসবুক আপনার মোবাইলে সেই কোড পাঠাবে যা ব্যবহার করে আপনি ফেসবুকে প্রবেশ করতে পারবেন। এই পন্থা শুনতে একটু জটিল মনে হলেও একবার করিয়ে নিলে বেশ সহজ। আর হ্যাকারের পক্ষে একইসঙ্গে আপনার ফেসবুক একাউন্ট এবং মোবাইল ফোন হ্যাক করা সম্ভব নয়। ফলে তারা আপনার একাউন্ট হ্যাক করলেও কোডের অভাবে সেটাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর ফেসবুক একাউন্টে সবসময় একটি সচল ইমেল একাউন্ট ব্যবহার করবেন।
৩. ফেসবুকে কেউ আর্থিক সহায়তা চাইলে সেই ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা না বলে কিংবা অন্য কোনভাবে পুরোপুরি নিশ্চিত না হলে সহায়তা করবেন না।
৪. অপরিচিত কাউকে ফেসবুকে বন্ধু করা থেকে বিরত থাকুন। এটা আপনার প্রাইভেসির জন্যও অনুকুল নয়। আর আপনার প্রয়োজন মতো ফেসবুকের সেটিংস পরিবর্তন করে নিন যাতে আপনি কোন বিষয়টি শুধু বন্ধুদের মধ্যে রাখতে চাচ্ছেন, আর কোনটা সবাইকে জানাতে চাচ্ছেন তা নিশ্চিত হয়ে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন।
কোনভাবে হ্যাকড হয়ে গেলে কি করবো?
সবার আগে যেটা করতে হবে, তাহচ্ছে ফেসবুককে জানাতে হবে। এজন্য ক্লিক করুন এখানে। এরপর ফেসবুকের দেখানো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একাউন্টটি ফেরত পেতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, একাউন্ট ফিরে পেতে চাইলে ফেসবুক আপনার সঙ্গে হ্যাক হওয়ার আগে আপনার একাউন্টে থাকা ইমেল আইডি এবং/অথবা মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চাইবে। এবং আপনি সর্বশেষ যে ডিভাইস দিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করেছিলেন সেটা দিয়ে আপনাকে আবারো ফেসবুকে প্রবেশ করতে বলতে পারে। তাই এগুলো হাতের নাগালে রেখেই ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুবিধা হবে।
আপনার কি কোন প্রশ্ন আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে।
ছবিসূত্র: এমএডাব্লিউ
Leave a Reply