রান্নাঘরের এঁটো থালাবাসন পরিষ্কার করতে গিয়ে আমরা অনেকসময়ই বেশ কিছু ভুল করে বসি যার প্রভাব পরে আমাদের রান্না করা খাবারের স্বাদে।

বড়সড় কোনো রান্নাবান্নার পর আমাদের রান্নাঘরটিকে রীতিমতন যুদ্ধক্ষেত্রের মতন দেখায়। সবজায়গায় নোংরা থালা-বাসন, বাটি, চামচ পরে থাকে। এরকম অবস্থায় আমরা প্রথমেই যেটা করি সেটা হলো সবকিছু পরিষ্কারের মিশনে নামি। সবকিছু পরিষ্কারের পর রান্নাঘরটি একেবারে ঝকঝকে তকতকে হবার পরেই শান্তি পাওয়া যায়! কিন্তু আমাদের পরিষ্কার করার এই প্রক্রিয়াটিতেই আমরা এমন অনেক ভুল করে বসে থাকি যেগুলি কখনো আমাদের চোখেও পরে না। ফলাফলস্বরূপ পরবর্তীতে একই বাসনকোসন বা যন্ত্র ব্যবহার করে রান্না করা খাবারের স্বাদে তারতম্য দেখা দেয়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এরকম কিছু ভুল সম্পর্কে…
প্লাস্টিকের জিনিসপত্র সাথে সাথে পরিষ্কার না করা
রান্নাবান্নায় প্লাস্টিকের বাটি বা পাত্র ব্যবহার করলে সেটা কাজ শেষ হওয়ামাত্রই ধুয়ে ফেলা উচিত। প্লাস্টিকের পাত্র স্টিল, সিলভার বা কাঁচের পাত্রের চেয়ে ভিন্ন। এঁটো অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ রেখে দিলে ভালোভাবে না ধুলে আগের খাবারের গন্ধ প্লাস্টিকের বাটি থেকে যায় না। বাসায় ডিশওয়াশার ব্যবহার করলে ভুলেও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ধোঁয়ার জন্যে ডিশওয়াশারের ভেতর রাখবেন না। প্লাস্টিকের সবকিছু ব্যবহারের পরপরই সবসময় হাতে ধোঁয়া সবচেয়ে ভালো।
ওভেন ঠিকঠাকভাবে পরিষ্কার না করা
ওভেন প্রতিবার ব্যবহারের পরই পরিষ্কার করার কোনো প্রয়োজন নেই। ওভেন কেবলমাত্র তখনই পরিষ্কার করা উচিত যখন সেটা পরিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ধরুন মাংস বা কিছু ওভেনে গরম করতে দিলেন, বা কিছু একটা রান্না করলেন যেটা ছিটকে ওভেনের দেয়ালে বা নিচে পরেছে। এরকমটা হলে ব্যবহারের পরপরই ওভেন পরিষ্কার করে ফেলতে হয়। অন্যথায় পরবর্তীতে যে রান্নাটা করবেন সেটায় আছে রান্না করা খাবারের একটা গন্ধ থেকে যাবে।
কেবলমাত্র বেকিং সোডা আর ভিনেগার ব্যবহার করে ওভেন পরিষ্কার করার জন্যে দেখতে পারেন এই ভিডিওটি…
ডিশওয়াশিং সাবান বা লিকুইড ব্যবহারে সতর্কতা
থালাবাসন ধোঁয়ার জন্যে এখন শক্তিশালী লিকুইড বা সাবান পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ভিমবার বা ট্রিক্স লিকুইডের নাম। এগুলি অল্প ব্যবহারেই খুব ভালোভাবে হাড়িপাতিলের সবচেয়ে বাজে দাগও তুলে ফেলা যায় নিমিষেই। তবে ভিম বা ট্রিক্স ব্যবহারের বেলায় একটু সতর্ক থাকা ভালো। প্রথমত, যেহেতু অল্প পরিমাণেই ভালো পরিষ্কার হয় সেহেতু যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করে থালাবাসন পরিষ্কারের চেষ্টা করবেন।
সাবান বা লিকুইড ব্যবহারে পরিষ্কার হয়ে যাবার পরে থালাবাটি আরেকবার ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন, যাতে কোনোপ্রকার গন্ধ না থাকে। চেষ্টা করবেন পুনরায় ব্যবহারের আগে হাড়িপাতিল শুকিয়ে নিতে। ধুয়েই সাথে সাথে চুলায় বসিয়ে দিলে লেগে থাকা পানি টেনে যাবার সময় খারাপ রকমের একটা গন্ধ পাবেন, যেটা আপনার রান্না করা খাবারের স্বাদ অনেকাংশেই কমিয়ে দেবে। পাশাপাশি শরীরে রাসায়নিক পদার্থের বাজে প্রভাবতো আছেই।
সঠিকভাবে কফি মেশিন পরিষ্কার না করা
আপনার ক্যাফেইনের প্রতি আসক্তি থাকলে কফি মেশিন নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। নাহলে আগে ব্যবহার করা কফি আপনার নতুন তৈরি করা কফির স্বাদ পুরোপুরি নষ্ট করে দেবে।
ফ্রাই করার প্যান বা রসুনের ছেঁচনি কখনোই ডিশওয়ারে দেবেন না!
ফ্রাই করার প্যানের উপর একটা পাতলা আবরন থাকে। ডিশওয়ার ব্যবহারে করে সেটাকে ধোয়া হলে সেই আবরনটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলাফলস্বরূপ, খাবার অল্পতেই পুড়ে যাবার মতন সমস্যা দেখা দেয়। আর রসুনের ছেঁচনি হাতে না ধোয়া হলে সেটা পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না। রসুনের ছোটো ছোটো কণা ভেতরে থেকে যায়। ফলে পরবর্তীতে ব্যবহার করার আগে থেকে যাওয়া রসুনের কণা খাবারের ভেতর গিয়ে পরে। এতে খাবারের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবার পাশাপাশি থাকে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
ডিশওয়াশারে দেওয়া উচিত নয় এমন আরো কিছু জিনিস।
রান্নাঘরে ভিন্ন ভিন্ন মাজুনি রাখুন
রান্নাঘরে অন্তত দুটি মাজুনি রাখুন। সাধারণ থালাবাটি পরিষ্কারের জন্যে প্লাস্টিকের বা কাপড়ের মাজুনি রাখুন। আর শক্ত ময়লা পরিষ্কারের জন্যে রাখুন একটু শক্ত একটা মাজুনি।
ফিচার ছবি: এক্সডব্লিউআরএন
[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]
Leave a Reply