একটি শিশু যখন ছোট থেকে বড় হতে থাকে তখন তার আশেপাশের পরিবেশ এবং তার পরিবারের কাছ থেকে সে শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতাই পরবর্তীতে তাকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

পৃথিবীতে একেক দেশের সংস্কৃতি একেক রকম। তাদের চলাফেরা,কথা-বার্তা, আচার- আচরণ সব কিছুই ভিন্ন। এমনকি একেক দেশের শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশটাও একেক রকম। সেরকমই একটি দেশ হল তিব্বত।
আমরা অনেকেই এটা জানি, তিব্বতের মানুষেরা ধৈর্য্যশীল এবং জ্ঞানী হয়। মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকগুলোর নিয়ে তাদের নিজস্ব কিছু দৃষ্টিভঙ্গি আছে। শিশুদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তাদের নিজস্ব বিশেষ একটি ধরন আছে। তিব্বতে একটি শিশুকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে এটি। যাতে সে বড় হয়ে চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং পিতামাতাকে সন্মান করে।
তিব্বতের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে শিশুদের গড়ে তোলার প্রক্রিয়াকে ৪ পর্যায়ে আলোচনা করা যায়। যেমন:
৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে:
তিব্বতের মানুষের মতে এ সময়ে বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের সাথে “রাজা বা রাণীর” মত কথা বলা। এ সময় শিশুদের কোন কিছুতে বাধা দেওয়া বা শিশুদের শাস্তি দেওয়া উচিত না। এই বয়সে শিশুরা তাদের আশেপাশের সবকিছু সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়। কিন্তু যেহেতু তাদের আগের কোনো অভিজ্ঞতা নেই তাই তারা যৌক্তিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ফলে অনেক ভুল করে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক কাজও করে ফেলে। এ সময় তাদের ভয় না দেখিয়ে তাদেরকে অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত করে দেওয়া উচিত। কারণ এ সময় শিশুদের যদি ভয় দেখানো হয় তাহলে তাদের সঠিক মানসিক বিকাশ ঘটবে না। পরবর্তীতে ওরা আর নিজে থেকে কিছু চিন্তা করবে না। শুধু অন্যদের অনুসরণ করবে। শিশুরা যত বেশি জানতে আগ্রহী হবে ততই তাদের মানসিক বিকাশ ঘটবে। তাই ভয় দেখিয়ে তাদের আগ্রহ দমন করা উচিত না।
৫-১০ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে:
এ সময় বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের সাথে ক্রীতদাস বা দাস-দাসীর মত কথা বলা। খেয়াল রাখবেন তারা যেন নির্বোধ না হয়। এ সময় শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে। তাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো উন্নত হয়। ভবিষ্যতে তাদের ব্যক্তিত্ব কেমন হবে তার ভিত্তি হলো এই বয়সটি।
এ সময় বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করা। সন্তানের জন্য বিভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। এসব লক্ষ্য কিভাবে অর্জন করা যায় তা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এসব লক্ষ্য অর্জন না হলে এর ফলাফল কি হতে পারে সে সম্পর্কে সন্তানদের ধারণা দিতে হবে। জীবনের যে কোনো পরিস্থিতির জন্য যাতে তারা প্রস্তত থাকতে পারে সেই শিক্ষা দেওয়া যায় এই বয়সে। একটি শিশুকে তার নিজের কর্মের জন্য নিজেই দায়ী হওয়া শিখাতে হবে।
এ সময় আপনার সন্তানদের বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দিন। যাতে তারা বিভিন্ন কাজ শিখার জন্য প্রস্তুত থাকে এবং বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করতে পারে। তিব্বতের বেশিরভাগ মানুষজনের মতে, এ সময় যদি আপনি আপনার সন্তানকে “রাজা” থেকে “ক্রীতদাস” এ পরিবর্তন না করেন তাহলে আপনার সন্তান নির্বোধ হবে এবং নিজের কাজের জন্য নিজে দায়ী হতে শিখবে না।
১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী:
এ সময় আপনাদের উচিত সন্তানদের সাথে কথা বলা। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আপনার অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান অনেক বেশি। কিন্তু আপনার উচিত সন্তানের কাছে তার নিজস্ব মতামত জানতে চাওয়া। এতে সে নির্ভয়ে তার মতামত আপনার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে পারবে।
তাদের সাহায্য করুন। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের কাছে পরামর্শ নিন। এ সময় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল উপদেশ দেওয়া; আদেশ বা নিষেধ নয়। কারণ এই বয়সে তাদের চিন্তা স্বাধীনতা গঠিত হয়। তাই এ সময় যদি আপনি তাকে অনেক কিছু থেকে নিষিদ্ধ করেন তাহলে আপনার সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। এতে করে এ সময় যদি তারা কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সে বিষয়ে আপনাকে কিছুই জানাবে না। এতে তারা অন্যদের মতামতের ওপর নির্ভর করতে শুরু করবে।
সন্তানদের সাথে বাবা-মায়ের সম্পর্ক এমন হতে হবে যাতে তারা যে কোনো কথা বাবা-মায়ের সাথে ভাগাভাগি করতে পারে।
১৫ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক:
এ সময় একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে গঠিত হয়। এ সময় শ্রদ্ধাশীল হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় আপনি তাকে উপদেশ দিতে পারেন। এ সময় একটি শিশু স্বাধীন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। তারা তাদের পিতা-মাতা এবং অন্যদের সম্মান করে।
লেখা: শামিমা নাসরিন মুমু
সম্পাদনা: মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম
[[তিব্বতের জ্ঞানের ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন? আপনার মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়। ]]
Leave a Reply