একটি শিশুকে মানুষ করা মোটেও সহজ কোনো ব্যাপার নয়। মনে রাখা উচিত যে, আপনার শিশু আশেপাশে যা দেখে তা থেকেই শিক্ষা নেয়। আর শৈশবে শেখা ব্যাপারগুলি প্রায় আজীবন থেকে যায় একজনের ভেতর।

বাবা-মা হবার দায়িত্ব অনেক। একটি শিশুর জীবনে প্রথম শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে তার বাবা-মা। একটি শিশুর জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে তারাই। সব বাবা-মা চায় তাদের সন্তান দয়ালু, সৎ এবং সাহসী হোক। কিন্তু এই গুণগুলি কিন্তু হঠাৎ করেই চলে আসে না! শিশু তার পারিপার্শ্বিকতা আর বাবা-মায়ের থেকে যে শিক্ষা গ্রহণ করে তার উপর ভিত্তি করেই তার মানসিক বিকাশটা হয়।
জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ব্রাইটসাইড মনে করে, আপনার শিশুর দশ বছর হবার আগেই তাকে নিচের এই দশটি কথা বলে দেওয়া উচিত। চলুন এগুলি সম্পর্কে জেনে আসা যাক…
ছেলে-মেয়ে উভয়কেই তুমি সম্মান করবে। সবাই সমান।
আপনার শিশুর মধ্যে অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা থাকাটা অতীব জরুরী। সে একই বয়সী বা ছেলে-মেয়ে যেই হোক না কেনো।
ভুল করতে ভয় পাবে না।
আরেকজনের জীবনে করা ভুল দেখে নিজে ভুল না করার শিক্ষাটা অনেক কম মানুষের মধ্যেই থাকে। কিন্তু এর পাশাপাশি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেবার ব্যাপারটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শিশুর হেরে যাওয়া বা কোনো ভুল করা নিয়ে ভয় পাওয়া উচিত নয়।
পরীক্ষায় ভালো গ্রেড পাবার চেয়ে শেখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অনেক সময়ই বাবা-মায়েরা খুব রাগ করে। কারণ তারা যেই গ্রেড আশা করেছে, দেখা যায় তাদের সন্তান সেই গ্রেড পায়নি। আপনার শিশু কতটা শিখতে পারছে সেটা সবসময় তার গ্রেড দেখে নির্ধারণ করতে পারবেন না। গ্রেড দিয়ে কখনোই একজনকে পুরোপুরি মূল্যায়ন করা যায় না। আপনার শিশুকে শেখান যে পরীক্ষায় ভালো গ্রেড পাওয়াটাই সব না। নতুন কিছু শেখার প্রতি আগ্রহ আর তা শিখতে পারাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
তোমার বাবা-মা তোমার শত্রু না। তুমি তাদের কাছে সাহায্য চাইতে পারো।
শিশুর সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করা সহজ হলেও নিজের সন্তানের বন্ধু হওয়াটা বেশ কঠিন একটি কাজ। বিশেষ করে তাদের যখন সমবয়সী বন্ধু হয় তখন। তাই বলে বন্ধু হবার জন্যে উঠেপড়ে লাগবেন না! আপনার সন্তানকে এটা দেখানোর চেষ্টা করুন যে আপনাকে সে বিশ্বাস করতে পারে। কোনোকিছু হলেও রাগারাগি করা, বকা দেওয়া বা লম্বা লেকচার দেবার অভ্যাসটা পরিত্যাগ করুন। এসবে কোনো কাজ করে না। বরং আপনার শিশু আপনাকে ভয় পেয়ে পরেরবার থেকে কিছু ঘটলেও আপনাকে আর জানাবে না।
সবসময় নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে বোঝান যে শিক্ষকরা যা বলবে সেটাই করতে হবে। শ্রদ্ধার শিক্ষাটা তাদেরকে একটু ভিন্নভাবে দিন। তাদেরকে বুঝান যে গুরুজনদেরকে সম্মান করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একইসাথে নিজের অধিকার আদায় করে নেওয়া বা প্রয়োজনীয় সময়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যকে খুশি করতে কখনোই নিজের অপছন্দের কোনোকিছু করবে না!
শিশুরা মনে করে যে বন্ধুমহলে জনপ্রিয় হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। তারা সবসময় সেটা করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে আপনার শিশুকে দেখান যে নিজের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আর নিজের কাছে সৎ থেকে কোনোকিছু করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যের মতামতকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের অপছন্দের কোনোকিছু করার মধ্যে কোনোপ্রকার কৃতিত্ব নেই।
কোনোকিছু বুঝতে না পারলে প্রশ্ন করবে।
প্রশ্ন করার ব্যাপারটা একেবারেই স্বাভাবিক। কোনোকিছু না বুঝেই সব বোঝার ভান করার চেয়ে হাজারটা প্রশ্ন করাও অনেক ভালো! আপনার শিশুকে এই শিক্ষাটি দেবার সবচেয়ে আদর্শ সময়টা হলো তার শৈশব। ছোটোবেলাতেই এই শিক্ষাটি না পেলে পরবর্তীতে সে কোথাও আটকে গেলে প্রশ্ন করতে ভয় পাবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে আটকেই থাকবে।
স্কুলে কখনো অসুস্থ বোধ করলে শিক্ষককে জানাবে।
একটি শিশুর কখনোই স্বাস্থ্য সম্পর্কে কথা বলতে ভয় বা দ্বিধা করা উচিত নয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভালো গ্রেড বা শিক্ষকের রাগারাগির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সন্তানকে এই শিক্ষাটি দিন যাতে সে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখে এবং কোনোকিছুর জন্যেই তার নিজের ভালো থাকার উপর কোনোপ্রকার ছাড় না দেয়।
প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা
আমরা প্রায়ই নোংরা রাস্তা সম্পর্কে অভিযোগ করি। নিজের পারিপার্শ্বিকতার প্রতি খেয়াল রাখা আর প্রকৃতিকে ভালোবাসার শিক্ষাটা পরিবার থেকেই শুরু করতে হয়। নিজেকে দিয়েই শুরুটা করুন, তারপর সেই শিক্ষাটা আপনার সন্তানকে দিন।
“না” বলতে শেখা!
আপনার শিশুকে প্রাপ্তবয়স্ক, শিক্ষক; এমনকি আপনার কোনো কথার উত্তরেও “না” বলার শিক্ষাটা দিন। আপনি যদি চান আপনার শিশু অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হোক, তাহলে তাকে এই শিক্ষাটা দিতেই হবে। নয়তো সে আপনার বা তার শিক্ষকদের একান্ত অনুগত একজন হিসেবে বেড়ে উঠবে। “না” বলার এই ক্ষমতাটা তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর।
[[লেখা সম্পর্কিত আপনার যেকোনো মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন নিচের মন্তব্য বক্সে বা ভেরিফাইড প্রেসের ফেসবুক পাতায়।]]
Leave a Reply